চমৎকার আটটি ছড়ার একটি শিশু-কিশোর উপযোগী বই ‘ভোরের পাখিরা ডাকে’। প্রখ্যাত ছড়াকার মাহমুদউল্লাহর লেখা এ ছড়ার বইটি ১৬ পৃষ্ঠাাই রঙিন ছবিতে সাজানো। বইয়ের প্রথম ছড়াটির নামেই বইটির নামকরণ হয়েছে। এ ছাড়া বয়েছে সত্যেন দত্ত, ঘরে ফেরা, শ্রাবণে, শাসন, আশ্বিনের দেশে, রোদসীর হাসি, হেমন্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ, শীতের ছবি, শিশুর মিনতি ও ফাল্গুনের এই দুপুরবেলা শিরোনামের ছড়া। এ ছাড়াগুলো বেশ কয়েটি বড় ছড়া। যেমন―ভোরের পাখির ডাকে ছড়াটি। এ ছড়ায় ছড়াকার লিখেছেন― ‘তোমরা আমাকে রেখো না কো বেঁধে ভোরের পাখিরা ডাকে, পাখি গান গায় কথা বলে যায় দু’চোখে স্বপ্ন আঁকে।’ ঘুম ভেঙে পাখির ডাক শুনতে কত যে ভালো লাগে। চারদিকে রোদ ঝলমল করে আর নানা পাখির ডাকে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয় ভোরবেলা। অনেক বাচ্চারা ভোরবেলা ঘুম থেকে জাগতে চায় না। তাদের জন্য এই ছড়াটি রইল। যদি ভোরবেলা পাখির ডাক শুনতে চাও তবে ঘুম থেকে জাগতে হবে কিন্তু। এ বইয়ের আর একটি ছাড়া ‘সত্যেন দত্ত’। সত্যেন দত্তও একজন বিখ্যাত ছড়াকার। তাকে ছন্দের জাদুকর নামেও ডাকা হয়। তার ছড়ার ছন্দ এতই নিখুঁত, নিপুণ আর গতিময়, যা একবার পড়তে শুরু করলে আর থামা যায় না। এই গুণী ছড়াকারকে নিয়ে ছড়াকার মাহমুদউল্লাহ লিখেছেন― ‘সত্যেন দত্ত ছন্দে মত্ত মত্ত ছন্দে রূপ-রস-গন্ধে।’ ‘ঘরে ফেরা’ ছড়ায় ইদে ঘরে ফেরা মানুষের নানা ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে। ‘শ্রাবণ’ নামের ছড়ায় আছে শ্রাবণ মাসের নানা চিত্র। শ্রাবণ মাসে হিজল ফুল ফোটে। মাঠ-ঘাট জলে ডুবে যায়। বিলের মধ্যে শাপলা ফুল ফোটে। আরো কত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এ সময় দেখা যায়। ‘শাসন’ নামক ছড়ায় তৃতীয় শ্রেণির একটি ছাত্রের নানা আবেগ-অনুভূতি নিয়ে এ ছড়াটি রচিত হয়েছে। পড়াশোনা করার সময় মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। স্কুলে শিক্ষকরা যা কাজ দেবে তা ঠিকমতো না করলে তাদের বকা শুনতে হবে। হেমন্ত, শীত আর ফাগুন নিয়েও রয়েছে কয়েকটি ছড়া। এসব ছড়ার মধ্যে এই মাসের ফুল, পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে নানা রকম দৃশ্যের বর্ণনা উঠে এসেছে। বইটি ছড়াপ্রেমীদের জন্য একটি মূল্যবান বই।
বরিশাল জেলার মেঘনা বিধৌত শ্যামল-ছায়াময় গ্রাম বদরপুরে ১৯৪৪ সালের ২৬শে আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন মাহমুদউল্লাহ। পিতা মৌলবি আজিজুর রহমান, মাতা আমিনা বেগম। তিনি আয়কর বিভাগ, পত্র-পত্রিকা, বেতার, টিভি, একাডেমি প্রভৃতি অঙ্গনে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। মাহমুদউল্লাহ রচিত উল্লেখযােগ্য বইগুলাের মধ্যে রয়েছে- ছড়া-কবিতা: ছানাবড়া, তােলপাড়, চড়ইভাতি, তিতকুটে, নিরালা দুপুর, মায়াবী জাহাজ, ঝিলিকমিলিক, ছয় ঋতুর আলপনা, মজার ছড়া,ঘুঙুর, রঙিন ঘুড়ি, ভােরের পাখিরা ডাকে গাবডালে আবডালে, বকের ঠোটে পুঁটি এবং ও রােদসী। কিশাের উপন্যাস : মেঠো পথ, মিছিল, চিতু ও পাতু, বেনু থাকে শহরে, ডাইনি। নাটক : দুই কবি, বেতাল বুড়াের কবলে। গল্প-উপকথা : হীরের টুকরাে গল্পগুলাে, আলােকিত জীবন গড়ার গল্প । বড়ােদের জন্য লিখেছেন- উপন্যাস : দাবদাহ, ধানস্বপ্ন, তৃণমূলে অজগর। ছােটোগল্প : দুর্ভিক্ষ অনন্তকাল। নাটক : হুজুর এলেন লাইনে, অসুন্দরের থাবা। তার সমগ্র সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একশাে ছড়া, শিশু-কিশােরসমগ্র, ছড়াসংগ্রহ, ছড়াসমগ্র, শিশুতােষ শত ছড়া, কিশাের কবিতা চয়ন। এছাড়াও রয়েছে কিশাের উপন্যাস সংকলন, মাহমুদউল্লাহর তিনটি কিশাের উপন্যাস এবং শ্যামল মাটির দেশ। রয়েছে জীবনী সংকলন সেরা দশ মহাজীবন, সেরা বারাে দেশ বরেণ্য মনীষী। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার, আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।