মূলের সঙ্গে খুঁটে খুঁটে না মিলিয়ে বলা যায়, মুজিবুল হক কবীর একগুচ্ছ কবিতার সহজ সরল-প্রাঞ্জল অনুবাদ হাজির করেছেন ‘জলরঙে আঁকি নক্ষত্রের খোঁপা’ নামের সংকলনে। গদ্যছন্দেভরা তরজমাকৃত কবিতাগুলো পাঠকবৃন্দের ভালো লাগবে বলেই আশা করা যায়। অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রয়াসে কবীরের সার্থকতার পেছনে মূলত কাজ করেছে কবিতার পাঠক হিসেবে তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা। তাঁর বাচিক ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব। অষ্টম শতকের চৈনিক কবি লি-পো থেকে শুরু করে ২০১১ সালের নোবেল বিজয়ী সুইডিস কবি টমাস ট্রান্স ট্রোমার পর্যন্ত সর্বমোট ৪০ জন কবির এক বা একাধিক কবিতার স্বচ্ছন্দ সংকলন বর্তমান গ্রন্থটি। অনুবাদ করা হয়েছে সরাসরি ইংরেজি ভাষা থেকে (যেমন- এজরা পাউন্ড, ডেরেক ওয়ালকট, ক্যারল এ্যান ডুফি প্রমুখের কবিতা) কিংবা অন্য ভাষায় লেখা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে। কবি ওক্তাভিউ পাজ্ আর ভারতের হিন্দিভাষী কবি মঙ্গলেশ দেবরাল- এ দুজনের সাতটি অনুবাদ রয়েছে। আর বাকিদের একটি দুটি-তিনটি-চারটি অনুবাদ কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত উক্তি- ‘কবিতার অনুবাদে যা হারিয়ে যায় তা হলো কবিতা’। কবিতা কী আদৌ অনুবাদ সম্ভব? ভাষান্তর বা অনুবাদে উৎস ভাষায় লেখা মূল কবিতাটির মর্মরস কতোটুকু থাকে? কবিতা-ভুবনের বিখ্যাত সব দেশি-বিদেশি অনুবাদক এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন বারবার। মূল কবিতার সুর ও স্বর অধরা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ-অসম্ভবের খেলায় মেতেছেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহির্বিশ্বের এজরা পাউন্ড, ওক্তাভিউ পাজ্ প্রমুখ অনেকেই। ভিন্নমাত্রা ও স্বাদযুক্ত করে এঁদের প্রায় সকলেই লক্ষ্য ভাষায় একেকটি কবিতাকে সার্থকভাবে নবনবরূপে নির্মাণ করেছেন। কবিতার অনুবাদও যে একটি সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম সেকথা প্রমাণ করেছেন এঁরা। এঁদের সঙ্গে কবি মুজিবুল হক কবীরকে এক সারিতে গণ্য করতে পেরে আমার আনন্দ অপরিসীম।