ইভান আবার ঢাকায় 'এই যে দেখ, আমি এসেছি।' চোখ মেলতেই চোখের সামনে ইভানের মুখ। 'অ্যাঁ!' শৌনকের মুখ দিয়ে শুধু এ শব্দটিই বের হল। শৌনক অবাক হবে না কেন? কাউকে কিছু না জানিয়ে কী করে ইভান ঢাকায় এল! শৌনক এদিক-ওদিক তাকাল। অন্তত হেনা ফুপুকে ইভানের পাশে দেখা যাবে বলে ভেবেছিল ও। নাহ! ঘরে আর কেউ নেই। একা ইভান ওর সামনে দাঁড়িয়ে। এবার চোখজোড়া বার-দুই কচলে নিল শৌনক। ভুল দেখছে না তো! না, ভুল নয়। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইভান। দুবছর আগে রাশিয়া থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরেছিল ইভান। ঢাকাতে ওদের বাড়িতেই উঠেছিল প্রথম। হেনা ফুপু সেবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। বহুদিন আগে হেনা ফুপু গিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে। সেখানেই এক রুশ ছাত্রকে বিয়ে করেছিলেন। এবার ঠিক করেছেন ঢাকাতেই থাকবেন। হেনা ফুপুর রুশ বরের নাম নিকোলাই নিকোলায়েভিচ। হেনা ফুপু বলে দিয়েছিল 'কোলিয়া আঙ্কেল' বলে ডাকতে। কোলিয়া আঙ্কেলের বড় ব্যবসা রাশিয়ায়। তিনি রাশিয়াতেই থাকবেন। হেনা ফুপুরা মাঝেমধ্যে রাশিয়ায় যাবেন আর কোলিয়া আঙ্কেলও মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসবেন। এই ছিল কথা। কেন হঠাৎ এতদিন পর রাশিয়া ছেড়ে আসতে হল, সেকথা ঢাকায় শৌনকদের বাড়িতে এসেই বলেছিলেন হেনা ফুপু। 'শোনো, এই বদমাশ ইভানটা একেবারেই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কখন যে কী করে, ঠিক নেই। রাশিয়ায় থাকলে ওকে মানুষ করতে পারব না। তাই আমরা দুজন মিলে ঠিক করেছি, এখন থেকে আমরা ঢাকাতেই থাকর।'
জাহীদ রেজা নুর ছােটদের জন্য লিখছেন অনেকদিন ধরে ছেলেবেলা থেকেই শিশুসাহিত্য গুলে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফলে, শিশুদের উপদেশ দেওয়ার চেয়ে শিশুদের কাছ থেকে উপদেশ নেওয়ার দিকেই তার ঝোঁক। প্রতি বছর একবার দলবলসমেত বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে, তারপর সে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লিখে ফেলেন উপন্যাস। সে উপন্যাসের নায়ক অবধারিতভাবেই শিশু বা কিশাের । বড়রাও থাকেন সে লেখায়, থাকতেই হয়, কিন্তু তারা কখনও মুখ্য হয়ে ওঠেন না। জন্ম ২৭ অক্টোবর। ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। প্রথম আলাে পত্রিকায় কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিদেশি ভাষা থেকে শিশুদের জন্য অনুবাদ করার নেশা আছে। তার বইয়ের সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হােসেন তার বাবা। মা নূরজাহান সিরাজী। আটভাইয়ের মধ্যে সপ্তম তিনি। স্ত্রী, মেয়ে সনকা আর ছেলে শৌনককে নিয়ে তার সংসার। সারা জীবন ছােটদের মতাে করে ভাবতে চান তিনি। আর ভাবেন, ইস! যদি বড় হতে না হতাে!