"জীবনের গল্প -দ্বিতীয় খণ্ড" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: এই বইতে রয়েছে জীববিজ্ঞান বিষয়ক ষোলটি নির্বাচিত প্রবন্ধ। জীবনের গল্প সিরিজের প্রথম খণ্ডে জীববিজ্ঞানের যেসব তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে, তারই ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটেছে এই প্রবন্ধগুলোতে। প্রথম খণ্ড পড়া না থাকলেও এই বইটি পড়লে বোধগম্য হবে, তবে প্রথম খণ্ডটি আগে পড়ে নেওয়া উচিত এজন্য যে, সেক্ষেত্রে এই বইটির পাঠ আরো ফলপ্রসূ হবে। প্রথম খণ্ড পাঠ করার পর দ্বিতীয় খণ্ড পাঠ করলে এমন কিছু বিষয় নজরে পড়বে যা এমনিতে নজরে পড়ার কথা নয়। বিষয়বস্তুগুলো সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই সাজানো হয়েছে। প্রবন্ধের তালিকার শুরুতে আছে ক্ষুদ্রতম অণুজীব ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শেষ প্রবন্ধটির বিষয়বস্তু ‘মৃত্যু’। আলোচ্য প্রবন্ধগুলোর মধ্যে যেমন ন্যানোটেকনোলজির সূক্ষ্ণ কিন্তু অত্যাশ্চর্য এবং অত্যাধুনিক এক জগত নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, তেমনি উঠে এসেছে জৈববিবর্তন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও। আছে রক্ত পরিসঞ্চালন সংক্রান্ত সাধারণ মানুষের ধারণা ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা, যা হয়তোবা ব্যবহারিক জীবনে যে কারো কাজে লেগে যেতে পারে। জগদীশচন্দ্র বসু, আবদুল্লাহ আল মুতী সহ দেশের গুণী বিজ্ঞান লেখকদের কিছু কালজয়ী লেখাও এতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। তবে একটা কথা বিশেষভাবে বলা রাখা দরকার, এই বইটির মূল উদ্দেশ্য এটা নয় যে কেউ এখান থেকে ষোলটি প্রবন্ধ পড়ে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক কিছু শিখে ফেলবে। বরং, প্রথম খণ্ডে শেখা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও মূলনীতিগুলো মাথায় রেখে এই খণ্ডের প্রবন্ধগুলো কেটেছিঁড়ে দেখতে শেখাই এর আসল উদ্দেশ্য। অন্যভাবে বললে, এই বইটির লক্ষ্য জ্ঞান বিতরণ নয়, জ্ঞান যাচাই করতে পাঠককে উৎসাহিত করা।
সূচিপত্র [১] ভাইরাসের উৎপত্তি [২] সম্ভাব্যতার কাঠগড়ায় প্রাকৃতিক নির্বাচন [৩] কৃষ্ণা-তৃষ্ণার বিচ্ছেদ বৃত্তান্ত [৪] হোমিওপ্যাথির কেন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই? [৫] কৃত্রিম প্রাণ: জীবনের নতুন গল্প [৬] একটি রক্ত পরিসঞ্চালনের গল্প [৭] ন্যানোচিকিৎসা [৮] বিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিদ্যা [৯] নির্বাক জীবন [১০] আমি হতে চাই একজন বিজ্ঞানী [১১] কুড়ি বছর পরে [১২] খেলায় খেলায় বদলে যাওয়া প্রাণের রূপকথা [১৩] রিফ্লেক্স এবং ভাষাবিজ্ঞান [১৪] স্মৃতি ও স্মৃতিতত্ত্ব [১৫] যেভাবে করা হলো পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং [১৬] মৃত্যুর উৎপত্তি
১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ও লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর। কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল থেকে প্রাইমারি এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, আর এ বিষয়ে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তার বাবা-মা। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়াকালে কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা অনেক বিরল বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেসব বইয়ের মাঝে তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতো গণিতের বই। ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহটা তার সহজাত, কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জীববিজ্ঞানকেও আপন করে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ঝিনাইদহ সরকারি স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বাবা এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মায়ের অনুপ্রেরণাও তাকে প্রভাবিত করেছে। তাই চিকিৎসক হওয়ার আশায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গণিত এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। সৌমিত্র চক্রবর্তীর বই লেখার ধাঁচ অনেকটা গবেষণাধর্মী, এছাড়াও বাংলায় সহজভাবে তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন যাতে করে সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়গুলো সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সৌমিত্র চক্রবর্তী এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রাণের মাঝে গণিত বাজে’, ‘জীবনের গল্প’, ‘জীবনের গাণিতিক রহস্যঃ পপুলেশন জেনেটিক্স ও গেইম থিওরি’, ‘গণিতের সাথে বসবাস’, ‘খণ্ড ক্যানভাস’ ইত্যাদি। বই লেখার পাশাপাশি তিনি আরো কিছু কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। তাঁর সময় কাটে অবসরে বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং চর্চা করে। ২০২১ সালে "করোনা বৃত্তান্ত" বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক "হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান লেখক পুরস্কার" -এ ভূষিত হয়েছেন।