বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষত সিলেট অঞ্চল বাউল-ফকির, মরমি সাধকপ্রসূ জনপদ। এই মরমি মৃত্তিকার ছাতক এলাকায় সাধক আফজল শাহের জন্মের ৪৩ বছর এবং দুর্বিন শাহের ১৫ বছর পর ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন আরেক সাধক গিয়াসউদ্দিন আহমদ। ক্রমে তিনি মরমি গানের এক মহাজন হিসেবে জনহৃদয়ে স্থান পেয়েছেন। মরিলে কান্দিস না আমার দায়' 'সিলট পরথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছে'; 'শেষ বিয়ার সানাই বাজিল ডাকছে কাল শমনে'। প্রাণ কান্দে মন কান্দে রে' প্রভৃতি তুমুল জনপ্রিয় এবং বহু মৌলিক গানের রচয়িতা গিয়াসউদ্দিন আহমদ (১৯৩৫-২০০৫)। আঞ্চলিক সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁর দান অপরিসীম। তাঁর পদাবলি সিলেটি ভাষায় রচিত হলেও তা বাংলাভাষীদের জনাদরে সিক্ত। পল্লিকবি জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬) গিয়াসউদ্দিন আহমদের গান শুনে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২) তাঁর মৃতদেহের পাশে বসে স্বজনদের 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়' গানটি গাওয়ার ওসিয়ত করেছিলেন। তাঁর গানের ভাবলালিত্যে মুগ্ধ হয়ে একাধিক গীত কণ্ঠে তুলে নেন সমকালেই বাউল গানের 'আইকন' শাহ আবদুল করিম (১৯১৬-২০০৯) ও দুর্বিন শাহ (১৯১০-১৯৭৭)। বাংলাদেশ বেতার ও দূরদর্শনের নামি শিল্পী রাসবিহারী চক্রবর্তী, রামকানাই দাশ (১৯৩৫-২০১৪), বিদিতলাল দাশ (১৯৩৮-২০১২), শেফালী ঘোষ, ইয়ারুন নেছা, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, সুবীর নন্দী, আকরামুল ইসলাম, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনসহ দেশবিদেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা তাঁর গান জনমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এখনও করছেন নানাবর্গের শিল্পীবৃন্দ। সময়ের আস্তরণ ভেদ করে গিয়াসগীতি শাশ্বত আনন্দলোকে অমোঘ সোচ্চার।
মোস্তফা সেলিম লুপ্ত বর্ণমালা সিলেটি নাগরীলিপি ও সাহিত্য গবেষণা, প্রকাশনা এবং তার নবজাগরণে অনন্য ভূমিকা রেখে দেশে-বিদেশে নন্দিত। তাঁর কাজের মূল্যায়ন করে ‘মোস্তফা সেলিমের নাগরিপ্রেম’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এবং The Daily Star প্রকাশ করে "Keeping an almost extinct script alive, a publisher's story" প্রতিবেদন। দেশে-বিদেশে এ বিষয়ে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। তিনি বাংলাপিডিয়া, লিবারেশনওয়ার পিডিয়াসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে কাজ করেছেন। নাগরীলিপির ২৫টি পুথি সম্পাদনা তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ। সম্পাদনা করেন মাসিক ভ্রমণচিত্র। মোস্তফা সেলিমের জন্ম মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।