আমার রাজনৈতিক পদ্য ও কিছুকথা পঁচাত্তর পরবর্তী বীর বাঙালির হাজার বছরের গৌরবান্বিত সব অর্জনকেই ধ্বংস করা হয়েছিলো সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। কী এক আদিম লীলায় মেতে উঠেছিলো বিপদগামী পথভ্রষ্ট সামরিক জান্তা; পাক-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এ দেশীয় ঘাতক দালালরা। তাদের সেই হিংস্রতা কি ভাষায় বর্ণনা করা যায়? কোনো সভ্য মানব সমাজ তা মানতে পারে? কি ভয়ঙ্কর বীভৎস খুনিরা হামলে পড়ে কারাগারে বন্দি চার জাতীয় নেতার ওপর! যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক চরম জঘন্য হত্যাকাণ্ড। সেই নৃশংস ভয়াবহতারই সুযোগটি নিয়েছিলো পাক-হানাদারের দোসর জামাত-শিবির রাজাকার চক্র। যারা আমাদের মাটি ও মানুষের দুশমন, আকাশ ও বাতাসের ঘৃণিত শত্র“। এসব জঘন্য খুনিদের বাংলার পবিত্র ভূমিতে পুনর্বাসিত করলো কে? আরেক খুনি সামরিক জান্তা! স্বাধীনতার দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে সেই দেশদ্রোহী ঘাতকরা কিভাবে বাংলার সন্তানদের হাত-পায়ের রগ কাটার বীভৎস উল্লাসে মেতে উঠেছিলো! কতো মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই হিসেব বিশ্ববাসী জানে। ফ্যাসিবাদী খুনি জিয়া জামাত-শিবির খালেদা- তাদের আদিম বর্বরতায় বীর বাঙালির গর্বিত সব অর্জনকে নস্যাৎ করেছিল। বড়ো নির্মম ও নির্দয়ভাবে ভয়ঙ্কর ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিক্ষেপ করেছিলো বাংলা মায়ের গর্বিত সব ইতিহাস ঐতিহ্যকে, শান্তিপ্রিয় মানুষের মূল্যবোধকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর ইতিহাসকে করেছিল বিকৃত। খালেদা নিজামী জোট সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন আর হাওয়া ভবনের অশুভ অপযুদ্ধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে আমার রচিত বিভিন্ন সময় লেখার সংকলন যা পাঠ করে আপনিও ফেটে পড়বেন তীব্র উত্তেজনায় দুর্বৃত্তদের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে। আজ দীর্ঘদিন পর হলেও সেই অশুভদের বিরুদ্ধে শুভবাদের কল্যাণীয় আলামত আমরা লক্ষ্য করেছি তরুণ প্রজন্মের তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে, যার সূত্রপাত রাজধানীর জনবহুল শাহবাগ মোড়ে, যা আজ দুনিয়াজুড়ে প্রজন্ম চত্বর নামে ইতোমধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেছে। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পাক-মার্কিনীয় এ দেশীয় দালালরা জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সব অর্জনকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো, আজ সে ঘৃণিত ভয়ঙ্কর খুনিরা দেখুক, জানুক সত্যকে কেউ ধ্বংসযজ্ঞের বিনাশি থাবায় মুছে ফেলতে পারে না, সত্য তার আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে। আজ দীর্ঘ জনম পর হলেও আমার সেই প্রবল প্রত্যাশা পূরণের শুভ আভাস পাই। তাই আমি প্রচণ্ড আবেগিত কণ্ঠে বলতে চাই আপনারা যে স্বপ্নজাগানিয়া গান শোনালেন সত্যের সঠিক ইতিহাসের আলোয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের হারানো অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠার বজ্রকঠিন শপথ পাঠের মাধ্যমে তা অনন্তকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আপনাদের কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে এই মাটি ও মানুষের এবং ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি পরম ভালোবাসার প্রতিবাদী গণজাগরণের অমর সংগীত। দীর্ঘকাল পরও বাঙালির অমর ইতিহাস ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত ও ধ্বংস করার অপচেষ্টায় রাজাকারদের ক্ষমা সম্পর্কে না জেনে না বুঝে বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ভুল তথ্য দিয়ে জাতিকে অকারণে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে একটি কুচক্রি মহল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম আর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার কিছুদিন পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই ঘাতক দালাল-রাজাকার-জামাত ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন তা সংবিধান কিংবা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের আত্মবলিদান আর দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময় অর্জিত পবিত্র ভূমিতে যখন রাজাকারের গাড়িতে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে, তখন সে পতাকার আর্তনাদে আমার রাতের নিদ্রা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আমি আরো লক্ষ্য করলাম যে, পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের পর যে সামরিক জান্তা ক্ষমতার লোভে একজন রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েই কেবল ক্ষান্ত হয়নি জামাতের রাজনৈতিক অধিকারও ফিরিয়ে দিলো। তারই পথ ধরে সামরিক জান্তা জিয়ার বিধবা স্ত্রী রাজাকারকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসাতে একটুও লজ্জাবোধ করেন নি বিবেক বিবর্জিত অপকর্মে। শুধু কি তাই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফলে চরম মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃতির এক নষ্ট আস্ফালনে আগামী প্রজন্মকে বিভ্রান্তির অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলো ওই ঘাতকের দোসররা শুধু ক্ষমতার লোভে। এসব অনিয়ম অবিচার আর ব্যভিচারের বিরুদ্ধে রচিত আমার এ গ্রন্থ। আমি অতি ক্ষুদ্রপ্রাণ এক কাব্যশ্রমিক মাত্র। যার দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসে খসে পড়ে নক্ষত্রের ডানা। জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় প্রায় বাকরুদ্ধ ছিলাম। তারপর কি করে কিভাবে যেন মুক্তজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে সাহিত্যের বড়ো জটিল ও কঠিন শাখা কবিতা চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করলাম তাও ভাবতে বড়ো অবাক লাগে। সত্যিই আমি বিস্মিত, হতবাক, এই ভেবে যে, আমার মতো এক ঠিকানাহীন উড়নচণ্ডি উদ্বাস্তু সন্ন্যাসীর কাব্যপ্রেমে সারাক্ষণ সারাবেলা ধ্যানমগ্ন থাকা। আমার দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের প্রতিবাদী ধারার কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে বর্তমান গ্রন্থ নীল বিষাদের আগুন রাজনৈতিক পদ্য শিরোনামে। এসব লেখায় দেশদ্রোহী রাজাকারের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। ঠিক সেভাবে উঠে এসেছে যারা রাজাকারকে দীর্ঘদিন ধরে জামাই আদরে লালন-পালন করে আসছে তাদের বিরুদ্ধেও তীব্র বিষোদগার। একইভাবে আমি ক্ষোভ ও ক্রোধের অমীমাংসিত অনল বুকে সেই সব ঘৃণিতদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছি বিভিন্ন সময়। এ গ্রন্থের সব কবিতাতেই সেই দ্রোহ ও ঘৃণার স্ফুলিঙ্গ বিচিত্র ছটায় বিচ্ছুরিত হয়েছে। প্রিয় পাঠক, আপনি বাঙালি হলে, দেশ মাটি ও স্বাধীনতাকে বুকে লালন করলে আমার এই বইটি সংগ্রহ করে পড়লে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। শাফিকুর রাহী . ৩০ নভেম্বর ২০১৩ শান্তিবাগ, ঢাকা
Safiqur Rahi তারুণ্যের প্রতীক কবি শাফিকুর রাহী জন্মভূমির কাদামাটির কোমল কোল ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকায়। বাংলার অজ অবহেলিত শস্যময় শ্যামল ভূমিতে সৈয়দ বংশের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১ জুন ১৯৬১ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার গজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা : মো. মোবারক আলী, সাদামাটা এক ভূমিপূত্র, মাতা : কুলসুমন্নেসা, বাংলার চিরায়ত এক স্বপ্নহীনা মুখ। তিনি নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। শিক্ষা : আজো অধ্যয়নরত। তাঁর পৈতৃক নিবাস: ফেনী চেলার দাগনভূঁঞা উপজেলাধীন ৩নং পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গজারিয়া গ্রাম। দাদা-মিয়া খলিলুর রহমান, দাদী-জুলেখা বেগম। নানা-ভুলু মিয়া, নানী-উলফতুন্নেসা, শাপুয়া গ্রামের অধিবাসী। এই স্বভাবকবি শাফিকুর রাহী শেরপুর জেলার শ্রীবরর্দী উপজেলাধীন ভায়াডাঙা গ্রামের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: মমতাজ উদ্দিন এর পঞ্চম সন্তান মনোয়ারা বেগম কোয়েলির সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। কবির প্রথম পুত্রসন্তান মারা যায় বিনাচিকিৎসায়, একমাত্র কন্যা সৈয়দা শারফিন জাহান মনন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। শাফিকুর রাহী সত্তর দশকের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু করলেও মধ্য আশিতে লেখক হিসেবে কাগজে কলমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। সময়ের শক্তিমান কবি শাফিকুর রাহী বিরহী, প্রেমিক। তাঁর কবিতায় স্বদেশ স্বভূমি আসে বহুধা অভিধায়। তাঁর প্রেম নিখাদ শৈল্পিক কারুকাজে বাধা পড়ে শব্দের ফ্রেমে। এখন তিনি স্বদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নিপুণ মমতায় ধারণ করেন মননের ঝুলন্ত অলিন্দে, আর এভাবেই হয়ে যান নির্ভেজাল ক্ষুদিরাম। রাহী এই সময়ের কাব্য অরণ্যে মন্ত্রমুগ্ধ শাণিত সুরের বেদনা বিদ্রোহী বিহগ। তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে সহজেই। লোক-রোমান্টিক এই কবির শব্দ উপমা, স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ব্যত্যয়ের জন্য রাহীকে চেনা যায়, চেনা যায় তাঁর কবিতাকে। তুমুল স্বপ্নবাদী এবং নিখাদ বাঙালি দেশজ কাব্যশিল্পী শাফিকুর রাহী লিখেছেন দীর্ঘসময় ধরে, আপন বৃত্তের যে স্বকীয় অবস্থান নির্মাণ করেছেন তা সময়কে উত্তীর্ণ করে তাঁকে নিয়ে গিয়েছে সুখ্যাতির শিখরে। প্রেম দ্রোহ মানবতার কবি হিসেবেও অর্জন করেছেন খ্যাতির গোলাপ। কবিতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্যেও রয়েছে তাঁর প্রশংসিত পদছাপ। একজন আবেগী সংগীত রচয়িতা হিসেবেও কুড়িয়েছেন প্রশংসা। সময়ের সাহসী স্বাপ্নিক কবি শাফিকুর রাহী লিখেছেন অনর্গল। শাফিকুর রাহী স্বপ্নচাষী। মানুষের সুন্দর ও নিরাপদ জীবনের স্বপ্নে গ্রথিত হতে থাকে তাঁর কাব্যের পঙতিমালা। শত দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণার পৃথিবীতে বাস করেও রাহী আশাবাদী। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মাটি ও মানুষকে রক্ষা করার সংকল্পে তাঁর শানিত শব্দমালার প্রকাশ তারুণ্যের দ্রোহী কণ্ঠ। মা বাবার বাঁধন-ছেঁড়া চির অভিমানী রাখাল গৃহবিবাদের কারণে প্রিয় স্বজনের অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংঘাত সংঘর্ষকে এড়িয়ে যৌবনের শুরুতেই জন্মভূমির বসতভিটে ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। আজো সেই ক্ষোভ ও দ্রোহের অঙ্গীকারে অবিচল তিনি।