পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা ছাড়া সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ প্রভৃতি জেলায়ও পাহাড়ি ভূমি আছে। তবে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের মতো ওসব জেলার পাহাড়গুলোতে জুম চাষ হয় না। এজন্য সেখানকার পাহাড়ে ফসলের বৈচিত্র্য তুলনামূলকভাবে কম। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি উপজাতির বাস। তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্য, পোষাক প্রভৃতিতে পার্থক্য থাকলেও চাষাবাদ পদ্ধতির মধ্যে একটা মিল রয়েছে, তা হলো প্রায় সব উপজাতি গোষ্ঠীই জুমে ফসল ফলায়। জুম হলো তাঁদের বাজারের মতো। একবার জুমে গেলে বাজার থেকে সওদা করার মতো বিভিন্ন খাদ্য, ফল ও শাকসবজি তারা নিয়ে আসে। লেখক খাগড়াছড়ির একটা জুমে ৩২ রকম ফসলের দেখা পেয়েছেন। বলাবাহুল্য এসব ফসলের মধ্যে ধান প্রধান। অন্যান্য ফসলের মধ্যে বিভিন্ন শাকসবজি ও মশলা ফসল অন্যতম। পাহাড়ের বাজারগুলো ঘুরে লেখক অনুসন্ধান করে ফিরেছেন পাহাড়ের বিচিত্র সব ফসল। পাহাড় থেকে পাহাড়ে ঘুরে দেখেছেন কমলা, আনারস, কাঁঠাল, কলাসহ আরও অনেক ফল। গবেষকেরা পাহাড়ে প্রায় ৪০ রকমের ফল জন্মে বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা পাহাড়ে ৩৬২ রকম লেবুরও সন্ধান পেয়েছেন। লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায় তাঁর ‘পাহাড়ি ফসল’ বইয়ে এরূপ বহু রকম পাহাড়ি ফসলের সাথে পাঠকদের পরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি লিখেছেন সেসব ফসলের চাষাবাদ নিয়েও। পাহাড়ের কৃষি নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের জন্য এটি একটি দরকারি বই।
কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় লিখছেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে এম.এসসি.এজি (উদ্যানতত্ত্ব) ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগতভাবে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। সর্বশেষ অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রয়েছে কৃষিক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সুদীর্ঘ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ফসল উৎপাদনের বিশেষ পারদর্শীতা, শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণের দক্ষতা। এর ওপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন ‘বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল’ বইটি।। কৃষি বিষয়ে তিনি ইতােমধ্যে অনেকগুলাে বই লিখেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ৮৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে ৬২টি বই কৃষি বিষয়ক। কৃষি বিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ২০১২ সালে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমী অব এগ্রিকালচার স্বর্ণপদক।