আবিষ্কারের নেশায় বইয়ের সামারি বিখ্যাত ১৪ জন বিজ্ঞানীর ১৪টি আবিষ্কারের গল্প দিয়ে সাজানো এই আবিষ্কারের নেশায় বইটি। সত্যি নেশায় ডুবে যেতে হবে, জীবনীর মানেই এখানে বদলে দেয়া হয়েছে। যে সব ছোট বাচ্চারা নতুন নতুন কিছু আবিষ্কারের মত্ত থাকে তাদের জন্য এই বই। কিভাবে ছোট ছোট ঘটনা বা চিন্তা থেকে কত বড় আবিষ্কার হয়েছে তা জানলে আমাদের শিশু-কিশোরদের মনে অনেক উৎসাহ পাবে। আপনার সন্তান যদি বিজ্ঞানমনষ্ক হয় এবং বয়স যদি ৫-১৪ মধ্যে থাকে তাহলে তাঁর জন্য এই বই পড়া বাধ্যতামূলক। ব্যাঙ-নাচানো বিজ্ঞানী, আসল চাঁদ আর নকল চাঁদ, বিজলি এল হাতের মুঠোয় এমন সব মজার নামকরণে লেখা বইটি। কিভাবে এক বুড়োর দাঁতের ময়লার মধ্যেই ধরা পড়ল জীবাণুর নতুন রহস্য, কিভাবে বাথ টবে গোসল করতে গিয়ে জানা গেলো খাঁটি সোনার রহস্য জানতে চাইলে পড়তে হবে এই বই। আমাদের সবার প্রিয় রাগিব হাসান তাঁর বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা বইটিতেও এই বইয়ের রেফারেন্স দেয়া আছে। আবিষ্কারের নেশায় বইয়ের সূচিঃ * আবিষ্কারের নেশায় * একটি মানুষ * তবু যে পৃথিবী ঘুরছে * পানির ফোঁটায় আরেক জগৎ * লাস্ট বয় থেকে সেরা বিজ্ঞানী * বিজলি এল হাতের মুঠোয় * ব্যাঙ-নাচানো বিজ্ঞানী * ডারউইনের অভিযান * ঘর-পাগল কাজ-পাগল সেই ছেলেটি * শুধু একটি চাবি * সুন্দর, হে সুন্দর * ভারি এক মজার লোক * প্রকৃতিকে বাগ মানানো * সাদা চাল লাল চাল * আসল চাঁদ আর নকল চাঁদ * আমি হতে চাই একজন বিজ্ঞানী * এ বইতে যেসব বিজ্ঞানীর কথা রয়েছে
আবিষ্কারের নেশায় - একটি ক্লাসিক এক বিজ্ঞান বই আব্দুল্লাহ আল-মুতী, যার লেখা সব সময়ই স্রোতের অনুকূলে। অত্যন্ত মনোহর তার বইগুলো। সারা জীবন লিখে গেছেন। তার লেখা প্রায় সবগুলো বই-ই বিজ্ঞান বিষয়ক। কটমটে বিজ্ঞান বলতে যা বোঝায় তা নয়, তিনি যা লিখে গেছেন তাকে বলা যায় 'বিজ্ঞান সাহিত্য'। সাহিত্যের মমতায় বিজ্ঞানকে মুড়ে দেবার চমৎকার একটা ক্ষমতা ছিল তার। তেমনই মমতাময় একটি বই হচ্ছে "আবিষ্কারের নেশায়"। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এর জন্য সে বছরই ইউনাইটেড ব্যাংক সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছিলেন লেখক। বিজ্ঞানের কয়েকটি আবিষ্কারের গল্প নিয়ে সাজানো এই বইটি। পাশাপাশি টেনেছেন ইতিহাস, বলেছেন পেছনের গল্প, এনেছেন প্রাসঙ্গিক সব বিষয়, দেখিয়েছেন আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীদের কী অদম্য নেশা! এই হিসেবে বলা যায় বইয়ের নামকরণ উপযুক্ত হয়েছে। এই বইয়েরই এক কোনা থেকে- " হল্যান্ডের এক আধপাগলা ঝাড়ুদার। ঘষে-ঘষে লেন্স বানিয়ে তার ভেতর দিয়ে রাজ্যের সব জিনিস দেখা তার নেশা। একদিন তার চোখে পড়ল বাগানের গাছতলায় দাঁড়িয়ে সাদাসিধে এক দাড়িওয়ালা এক বুড়ো। কথা বলতে গেলে লোকটার মুখের দুর্গন্ধে টেকা যায় না--তার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে থিকথিক করছে ময়লা। জিজ্ঞেস করল : ওহে বুড়ো, কতদিন আগে দাঁত মেজেছ? দাঁত মাজবার কথা শুনে বুড়ো যেন একটু অবাক হয়। দাঁত? সেতো কখনো মাজে নি সে! আর এই পাগলা মুদিকে তখন পায় কে! কী আছে এই দাঁতের ময়লায়? (শোনো একবার কথাটা, এমন কথা আর কি কারও মনে হবে-- নিতান্ত পাগল ছাড়া?) যেন একটা সোনার খনি পেয়েছে এমনি করে সে বুড়োকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে এল তার ঘরে। তারপর তার দাঁতের ফাঁক থেকে খুবলে তুলে নিল খানিকটা সেই আদি অকৃএিম ছ্যাতলা। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে সেই দাঁতের ময়লার মধ্যেই ধরা পড়ল জীবাণুর নতুন রহস্য। এমনি অনুসন্ধিৎসা ছিল অণুবীক্ষণের আবিষ্কারক লেভেনহুকের। আর তার আবিষ্কার মানুষকে দিয়েছে রোগ-মারিকে কাবু করবার, দীর্ঘ সুস্থ জীবনের জন্য সংগ্রামের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। ...... কোনো ছোট প্রশ্নই আসলে ছোট নয়...... বহু বড় বড় আবিষ্কার হয়েছে অতি তুচ্ছ সূত্র থেকে, অতি সামান্য জিজ্ঞাসা থেকে।"। বইটি থেকে জানা যাবে আর্কিমিডিস কী করে বিজ্ঞানের সাহায্যে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বড় এক সৈন্য বাহিনীর আক্রমণ ঠেকিয়েছিল; গ্যালিলিও কীভাবে দেখলেন বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ, সত্য প্রচার করার জন্য কী পরিমাণ শাস্তি পেতে হয়েছিল তাকে; লেভেনহুকের আবিষ্কার দেখার জন্য কীভাবে ইংল্যান্ডের রানী পর্যন্ত চলে এসেছিলেন; নিউটন কীভাবে লাস্ট বয় থেকে দুনিয়ার সেরা বিজ্ঞানী হলেন; ব্যাঙের ঠ্যাঙ থেকে কীভাবে ব্যাটারি আবিষ্কারের দ্বার খুলে গেল; লুই পাস্তুর কীভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন একটি ছেলেকে, কী করে আবিষ্কার করলেন জলাতঙ্কের প্রতিষেধক; নিজের আবিষ্কারের জন্যই কীভাবে কুড়ে কুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেলেন বিজ্ঞানী মাদাম কুরি ইত্যাদি। বইটি বর্তমানে অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। কিশোর-তরুণদের কাছে বইটা খুব ভালো লাগবে। অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'কিশোর বিজ্ঞান সমগ্র'তে স্থান পেয়েছে এই বইটি। মোট সতেরটি অধ্যায়। ১৪ জন বিজ্ঞানীর ১৪টি আবিষ্কারের গল্প। বর্ণনার ঢং কিশোর বান্ধব। উৎকৃষ্ট। এই দিক থেকে বলা যায় ক্লাসিক পর্যায়ের একটা বই। অধ্যায়গুলোর নামকরণও বেশ সুন্দর ও ব্যতিক্রম-। বইয়ের শেষের দিকে ছোটরা কি করে সহজে বিজ্ঞানী হতে পারবে তার জন্য বাতলে দেয়া আছে সহজ উপায়। কিশোর তরুণের অবশ্যপাঠ্য বইয়ের তালিকায় এটি থাকতে পারে। স্বাদু ভাষা, দুর্বোধ্যতা নেই, ভাষাগত দিক দিয়ে একদম আদর্শ।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল-মুতী নিজস্ব একটি ভুবন তৈরি করেছিলেন। বিজ্ঞানের নানা বিষয় জনবোধ্য ও সরস করে পরিবেশনের যে স্বপ্ন রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন আবদুল্লাহ আল-মুতীর লাবণ্যময় রচনায় আমরা তার বাস্তবরূপ দেখতে পাই । বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার জগতে তাই তার অনন্য একটি ভূমিকা আমরা প্রত্যক্ষ করি। ড. আবদুল্লাহ আল-মুতীর জন্ম ১৯৩০ সালে । শিক্ষাজীবন শুরু রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসায় । তারপর কলকাতা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করার পর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে। শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সচিব হিসেবে। দুরারোগ্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ ৩০ নভেম্বর ১৯৯৮। বিজ্ঞানসাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭৫ এবং ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার ১৯৮৩ সালে। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার অগণিত পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিষয়ে তিনি এখনো অপ্রতিন্দ্বন্দ্বী।