নিশুতি রাত। স্বপ্ন তাড়িত গভির রজনীর নির্ঘুম মুহূর্তগুলো কিছুতেই কাটছে না। রাতের কালো অন্ধকার তখনও ফুরোয়নি। শীতের রাত একটুতো দীর্ঘ হবেই। পেটের ক্ষুধা থাকলে ঘুমও আসে না চোখে। তখনই অন্তরের কথাগুলো যাত্রাপালার সংলাপের মতো মনে ভেসে উঠে। ঠিক একই সময়ে মুয়াজ্জিনের বাণী। ওঠো বান্দা, বান্দা উঠো। নামাযের জন্য প্রস্তুত হও। জামাতের জন্য মসজিদে যাও। জামাত-নামায না পড়িলে রসুল (রা.) বেজার হয়। আবার কে যেনো ডাকছে কাকে। কিছুই বুঝা যায় না। দুরগ্রাম থেকে ভেসে আসছে কীর্ত্তন- লীলার শব্দ হিন্দুগ্রাম হতে। ছন্নছাড়া, অন্নছাড়া বৈচিত্রহীন অদ্ভুত মানুষগুলো অযথা রাতে শুতে যায় বিছানায়। সন্ধান মিলে না ঘুমের, সন্ধান মিলে না কোনো সুখ স্বপ্নের। শুধু ভেজা বাতাসের অন্তরালে বাসনাগুলো গুমরে গুমরে মরে। বিহঙ্গকুলের ডাক ও শিশিরের মায়া কেটে সূর্য্যের আগমন ধ্বনী তাই বিলম্বিত হচ্ছে। মা, মা... ও মা শুনছো। আমি কাল স্কুলে যাবো না। মাষ্টার প্রাইভেটের টাকা পায়। বিজ্ঞান বইটা নেই। স্কুলের পড়া হয়নি। মাষ্টার বাবু বকবেন। গলা খেকরিয়ে মা বিরক্তির কণ্ঠে বলে উঠে। তোমরা থামবি। আমাকে ঠিকমতো ঘুমাতেও দিবে না। দুঃখভরা মনে মনে ভাবে। হ্যাঁ, গতরাতে ছেলে সানোয়ারতো মুখে কিছু দেয় নি। শুধু ভাত ছিলো। তরকারি বলতে কিছু ছিলো না। আলু ভর্তা দিয়ে ছেলেটা কিছু খেতে পারেনি। মাছ নেই, ডাল নেই, সবজি নেই। কি দিয়ে সে বাচ্চাদের জন্য তরকারি বানাবে।