এতদিন ‘সাহেব বিবি গোলাম' বইখানিতে মশগুল ছিলেম। শেষ হয়ে গিয়ে খালি খালি লাগছে। যেন বহুদিনের বন্ধু-বিচ্ছেদ হল, সঙ্গহারা হয়ে পড়লেম। সেই সঙ্গসুখ আরও কিছুদিন টেনে রাখবার জন্যে ইচ্ছে হল বইখানির একটা সমালোচনা লিখি, তবু তো সেই সব লোক নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারব। লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি যে যদিও আমি খুব গল্পভক্ত, তবুও বাঙলা গল্পের বই খুব কমই পড়ি, বিশেষতঃ আজকাল। খবরের কাগজই আমাদের বেদ, কোরাণ, বাইবেল। দিনান্তে একবার সে নিত্যকৃত্য সমাপন করতেই হয়, তা একঘেয়েই লাগুক আর ঝিমুনিই পাক। তার উপর যদি কখনো ছেলেপিলের পড়বার টেবিলে ইংরিজি কোন পুরানো টিটিকির বই পড়ে থাকতে দেখি ত গোপনে নেশাখোরের মত সেটা সংগ্রহ করে রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত উপভোগ করি। এহেন লোকের হাতে কি সূত্রে ‘সাহেব বিবি গোলামে'র মত মস্তমোটা একটা বাঙলা বই এসে পড়ল তা ঠিক মনে নেই । তবে এটুকু মনে আছে যে প্রথম ক’পাতা পড়েই নেশা ধরেছিল, তারপরে কে একজন বিনা বাক্যব্যয়ে বইটি পড়তে নিয়ে গেল এবং বং মলাট ছেঁড়া অবস্থায় ফেরত দিলে। তারপর থেকে যে ধরেছি, শেষ করে তবে ছেড়েছি; খবরের কাগজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ঘড়ির প্রতিযোগিতা, কিছুতেই আটকাতে পারেনি। দুঃখের বিষয় সব জিনিসেরই শেষ আছে।
Bimal Mitra কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের জন্ম ১৯১২ সালের ১৮ই মার্চ। চেতনা স্কুল ও আশুতোষ কলেজে শিক্ষালাভের পর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাশ করেন ১৯৩৮ সালে । গোড়ায় গান লেখার শখ ছিল । বিখ্যাত গায়করা তাঁর গানে সুর দিয়েছিলেন। পরে তিনি কথাসাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম জীবনে রেল বিভাগে চাকরি করতেন। তারপর সে গল্প-উপন্যাস প্ৰবন্ধ নিয়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা একশতরও অধিক। বাংলা ১৩৭০ সালে তার সরকার রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কারে সংবর্ধিত করেন। এই উপন্যাসটি এখনও পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তম এবং সর্বোচ্চ মূল্যবান উপন্যাস। তবে সাহিত্য পুরস্কার লাভের থেকেও বিমল মিত্র সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বঙ্গভাষার সাহিত্যিকদের মধ্যে শরৎচন্দ্রের পর তিনিই সর্বভারতীয় সাহিত্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন । তিনি বেগম মেরী বিশ্বাস, সাহেব বিবি গোলাম, কড়ি দিয়ে কিনলাম, একক দশক শতক, পতি পরম গুরু, এই নরদেহ-এপিক উপন্যাসের মাধ্যমে তিনশো বছরের সমাজজীবনের এক বিস্তৃতকালের চালচিত্র বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন । ১৯৯১ সালের ২রা ডিসেম্বর তার তিরোধান হয় ।