সরহ পা ছিলেন অষ্টম শতকের ব্যতিক্রমধর্মী এক সাধক- কবি। চর্যাপদে তাঁর ৪টি পদ বা কবিতা রয়েছে। তবে দেশে বিদেশে তাঁর সুখ্যাতি দোহা রচয়িতা হিসেবেই। ‘দ্য থ্রি সাইকেলস অব সরহ’স দোহা’ পাশ্চাত্যে বেশ পরিচিত। তিনি বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদের প্রতিষ্ঠাতাও। তিব্বতের তেঙ্গুরে ৭৫০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহাসিদ্ধাদের মধ্য থেকে চুরাশিজনের একটি তালিকা সংরক্ষণ করা হয়। তাতে সরহের নাম শীর্ষে। সরহের ব্যক্তিজীবন বড় বিচিত্র। এক বিখ্যাত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। নাম রাখা হয়েছিল রাহুল ভদ্র। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ছাত্র, পরে অধ্যাপক হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন। এ সময় ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করে চলে আসেন। স¤্রাট অশোকের সময় থেকে প্রচলিত ‘বিনয়পরম্পরা’ মান্য করে ভিক্ষুগণ স্ত্রী এবং মদ্যপান হতে বিরত থাকেন তবে সরহ এক অন্ত্যজ রমণীকে বিয়ে করেন এবং মদ্যপানে প্রবৃত্ত হন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী বা বিপ্লবী কবি বলতে মধুসূদন, নজরুল এবং সুকান্তের নাম মনে আসে। কিন্তু সরহ-ই প্রথম কবি যিনি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা এবং প্রথাবদ্ধ সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সাহিত্য রচনা করেন এবং নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হন। অষ্টম শতকের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমতট রাজ্যের পটভূমিতে সরহের বিচিত্র জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। একজন প্রথা বিরোধী কবির প্রেম এবং সৃষ্টির নান্দনিক ও মেধাবী পরিচয় পাওয়া যাবে এতে। আর পাওয়া যাবে তার সমকাল এবং প্রাচ্যের বিদগ্ধ ইন্টেলেকচুয়ালদের। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যসচেতন বিদগ্ধ পাঠকের কাছে এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে ঋদ্ধ এক জগতের সন্ধান দেবে, যা উচ্চতা, মান এবং রুচিতে ভিন্ন মাত্রার।
Abul Kasem- জন্ম কুমিল্লা জেলার ঝাকুনিপাড়া গ্রামে ১লা জুলাই ১৯৫৫-তে। প্রাইমারি স্কুল থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সরকারি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। দৈনিক বাংলা (অধুনালুপ্ত), দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা (অধুনালুপ্ত), বাংলা একাডেমি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর আলোচনা, প্রবন্ধ, গল্প, গবেষণা-নিবন্ধ প্রভৃতি ছাপা হয়েছে। এযাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।