“তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই" বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ তা হলে বৃষ্টি দিন, তা হলে ১৪ জুলাই নামহীন এক তরুনের গল্প, যে তার দিন যাপনের গ্লানি নিয়ে সকলের থেকে এত বেশী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যে আর কেউ টের পায় না। শুধু এক বৃষ্টিদিন তার বিচ্ছিন্নতার সমস্ত অহঙ্কার চূর্ণ করে। হঠাৎই তার মনে পড়ে, হয়তো আজ, হয়তো আগামীকাল ১৪ জুলাই। ১৪ জুলাই, সাম্য, মৈত্রী গনতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্মদিন। ১৪ জুলাই, - একটি মেয়ের জন্মদিন। কিন্তু এই অন্তঃমিল নেহাৎই কাকতালীয়। কেননা এই তরুন কিংবা তার বিচ্ছিন্নতার দিনলিপি জুড়ে থাকা মেয়েটির কেউই তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। মেয়েটি কখনোই তার দূরত্বের অর্গল ভেঙ্গে ছেলেটির পাশে দাঁড়ায়নি। ছেলেটি প্রতিদিন সাম্য, মৈত্রী, গনতন্ত্র ও স্বাধীনতার মৃত্যু দেখতে দেখতে নিজেও ডুবে গেছে এক প্রতিমৃত্যুর ভেতর। কেবল এইসব বৃষ্টিদিনে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার আচ্ছন্নতা কুড়িয়ে নিতে নিতে সে তরুন টের পায় কত দুরত্বে চলে গেছে সে পারিপার্শ্বিকতা থেকে। শ্রাবণঘন গহনমোহে একটু একটু করে ভুলে যাওয়া গন্ধের মত সে অনুভব করে নিজের বিচ্ছিন্নতাকে। একটু একটু করে সব কিছু মনে পড়ে তার। মনে পড়ে বন্যা প্লাবিত গ্রাম আর উপদ্রুত মানুষের নিঃস্বায়নগাথা, তারুন্যে সমাজবদল ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার কথা। মনে পড়ে ধর্ষিত বোন আলোকিতার মৃত্যুকথা। কিন্তু সে কোনও ইতিহাসনির্মাতা নয়, কেবলই এক অভিযাত্রী। এ সবের মধ্যে দিয়ে সে তাই নতুন কোনও ইতিহাস নির্মাণ করতে পারে না। তার অভিযাত্রার পথে সে দেখতে থাকে গ্রাম থেকে উঠে আসা হাজার হাজার পোশাককন্যাদের, - যারা নিস্তব্ধে পাল্টে দিচ্ছে দেশের ইতিহাসকে; অথচ নগরের গেঁয়ো সংক্রমণ থেকে ছড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া ঢেকে দিতে চাইছে তাদের অনিবার্য উত্থান কে। সে দেখতে থাকে তার হাতে গোণা প্রিয়বন্ধুদের, - যারা কেবলই হারিয়ে যাচ্ছে বিব্রত দিন নিয়ে। সে দেখতে থাকে নিজেকেও, - যে আসলে বিচ্ছন্নতার মধ্যে দিয়ে প্রতিমুহূর্তে আগলে রেখেছে ১৪ জুলাইকে, প্রান্তরের মেঠোসুরের গানে ভাসা এক নারী কে; যে আসলে এখনো অপেক্ষা করছে এমন এক আড্ডার জন্যে যেমন এক আড্ডা ফ্রান্সকে রক্ষা করেছিল, শ শ বছর আগে সাম্য, মৈত্রী, গনতন্ত্র ও স্বাধীনতার বানী নিয়ে পৃথিবী কাঁপিয়েছিল, খুব ই তুচ্ছ সব মানুষদের সামান্য স্বপ্ন নিয়ে অসামান্য আড্ডা হয়ে উঠেছিল।
জন্ম : ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ ; সিরাজগঞ্জের সলপ জনপদের রামগাঁতী গ্রামে। মা : হামিদা সুলতানা। বাবা : চৌধুরী ওসমান। পেশা : সাংবাদিকতা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : এমএসএস [সমাজ বিজ্ঞান]; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ : ডানাকাটা হিমের ভেতর (উপন্যাস, ১৯৯৬)। অন্যান্য উপন্যাস : আমরা হেঁটেছি যারা, চরসংবেগ, অন্ধ মেয়েটি জ্যোৎস্না দেখার পর, মোল্লাপ্রজাতন্ত্রী পবনকুটির, তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই, আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক, মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নীল কৃষ্ণচূড়ার জন্মদিনে, শাদা আগুনের চিতা, অন্তর্গত কুয়াশায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল। স্বীকৃতি : ‘মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সংগীতানুষ্ঠান’ গ্রন্থের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১২), লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), ‘শীতের জ্যোৎস্নাজাবলা বৃষ্টিরাতে’ গ্রন্থের জন্যে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ পুরস্কার (১৪২১), কিশোর উপন্যাস ‘পাতার বাঁশি বাজে’র জন্যে শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৪২১) এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০২০)।