সমাজ ও জাতিকে ঘিরেই আবর্তিত হয় ইতিহাস। কোনো ব্যক্তি সেই ইতিহাসের গণ্ডিতে নতুন মাহাত্ম নিয়ে জন্মগ্রহণ করলে সেই জাতি প্রাপ্ত হয় অনন্য বৈশিষ্ট্য। সেই জাতির ইতিহাসের প্রস্ফুটিত বিশেষব্যক্তির সমস্ত গুণ জাতিকে দান করে শক্তি। ব্যক্তি ও জুতি পরিপূরক শক্তি হিসেবে ইতিহাসকে করে তোলে মহিমান্বিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তেমনি এক ব্যক্তিত্ব- যাকে বাদ দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাস পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। এক মহান জাতিসত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রতিটি স্তর পার হতে হয়েছে বাঙালিকে শেখ মুজিবের অনন্য সাধারণ কর্মধারায় অভিষিক্ত হয়ে। সমাজ, পরিবেশ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, জাগরণ, উত্থান অর্থাৎ কিনা ইতিহাসের ক্রমবিকাশের ধারা বিকশিত হয়েছে এই এক ব্যক্তির মননের বৈশিষ্ট্যে। বাঙালি হয়ে উঠেছে এক মহান জাতিসত্তার অধিকারী। এক করুণ ও নিষ্ঠুর মৃত্যু এসে তাকে গ্রাস করেছে, সেই মৃত্যু শোকের কাফনে ঢাকা অমরত্বের অমোঘ আধার। এ মৃত্যু তাঁকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। ঘাতকের বুলেট কাপুরুষতার বর্মে আচ্ছাদিত হয়ে আঘাত করছে ঘাতককেই। কিন্তু মুজিব হয়ে আছেন চিরঞ্জীব। তার সারাজীবনের কর্মকাণ্ড, কার্যকরণ, সংগ্রাম, আপসহীনতা, মানুষের জন্য মমত্ববোধ, উপলব্ধির ক্ষমতা সমকালের ইতিহাসে- আগামী যুগের ইতিহাসে, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক মহান দলিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন তিনিই, চব্বিশ বছরের সংগ্রামের ক্রমপরিক্রমায়। তাঁর আবির্ভাব সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে যে মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রাম বাঙালির জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অহঙ্কার। এ এক অবিস্মরণীয় স্বপ্ন-সাধনার ফল, যা প্রতিমুহূর্তে নাড়া দিয়ে যায় আমাদের চেতনাকে। বাঙালির জাগরণই ঘটেছে অর্ধ-শতাব্দীকালের মধ্যে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই পৃথক জাতিসত্তায় পরিচিতি লাভ করে বাঙালি। জাতি হিসেবে বাঙালি যখন রাজনৈতিক সঙ্কটে তখনই শেখ মুজিবের আবির্ভাব, তা ছিল উল্কার মতো বেগবান। আমাদের দুস্তর বন্ধুর পথে স্বকীয় আবিষ্কারে, জয়ে, পরাজয়ের গ্লানি ও বেদনায়, সফলতায় ও ব্যর্থতায় তিনিই ছিলেন একক সঙ্গী।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।