বিশ শতকের বাঙালি-সংস্কৃতি ও বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল চিন্তাচর্চার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০)। ধর্ম পরিচয়ে ওদুদ ছিলেন মুসলমান-একথা যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য তিনি বাঙালি। তাঁর পরিচয়কে খণ্ডিত না করে, এই ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধে’র আলোকে পাঠক বিগত শতাব্দীর অন্যতম মানবতাবাদী সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও যুক্তিবাদী, উদারনৈতিক ওদুদের পরিচয়ের সমগ্রতাকে অনুধাবন করতে পারবেন, উপলব্ধি করতে পারবেন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাজগতের বহুমাত্রিকতাকে। ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ (১৯২৬)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’-এর অন্যতম চিন্তক ও সংগঠকরূপে কাজী আবদুল ওদুদ তিনটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন-এক. ‘বিচার-বুদ্ধির অন্ধসংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তি’-সমগ্র বাঙালির জাতিসত্তার মধ্যে মুক্তচিন্তার এই বীজ তিনি ও তাঁর সহযাত্রী যুক্তিবাদীরা বপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। দুই. মুসলমান সমাজকে বাংলার বৃহত্তর জাগরণের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে-সাংস্কৃতিক সংকট থেকে উদ্ধার করেন। তিন. হিন্দু-মুসলমানের বিরোধের কারণগুলিকে চিহ্নিত করে শাশ্বতবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি বাঙালিকে মনোযোগী করে তোলা। কাজী আবদুল ওদুদের সমস্ত রচনা তাঁর এই মানস-প্রবণতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ‘শাশ্বতবঙ্গ’সহ তাঁর চৌদ্দটি প্রবন্ধ গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত চল্লিশটি প্রবন্ধের এই সংকলনে ধরা আছে বিশ শতকের নবজাগ্রত মুসলমান বাঙালির মুক্তচিন্তা ও আত্ম-নিরীক্ষার বিশ্লেষণী বীক্ষা।
জন্ম : ২৬ এপ্রিল ১৮৯৪, নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার জগন্নাথপুরে মামার বাড়িতে। পৈত্রিক নিবাস তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার বাগমারা গ্রাম। পিতা কাজী সৈয়দ হােসেন ওরফে সগীরউদ্দীন। মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। শিক্ষা : ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৯ সালে এমএ পাস করেন। কর্মজীবন : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যােগদান। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে টেক্সট বুক বাের্ডের সেক্রেটারি রূপে কলকাতায় যান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অবসর গ্রহণ। প্রকাশিত গ্রন্থ : নবপর্যায় (প্রথম খণ্ড-১৩৩৩), (দ্বিতীয় খণ্ড-১৩৩৬), রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪), সমাজ ও সাহিত্য (১৩৪১), হিন্দু-মুসলমানের বিরােধ (১৩৪২), আজকার কথা (১৩৪৮), কবিগুরু গ্যেটে (১ম খণ্ড-১৩৫৩), (২য় খণ্ড-১৩৫৩), নজরুল প্রতিভা (১৩৫৫), Creative Bengal (১৯৫০), শাশ্বত বঙ্গ (১৩৫৮), স্বাধীনতা দিনের উপহার (১৯৫১), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১ম-১৩৬২, দ্বিতীয়-১৩৭৬), বাংলার জাগরণ (১৩৬৩), শরৎচন্দ্র ও তারপর । (১৯৬১), হযরত মােহাম্মদ ও ইসলাম (১৩৭৩)। পুরস্কার : ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ। মৃত্যু : ১৯ মে ১৯৭০ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।