সাক্ষী আছে নীল ফেলিন তরঙ্গোত্তাল এই বঙ্গোপসাগর। সাক্ষী আছে ওই নীল বনাচ্ছন্ন উপকূল জুড়ে মালার মতো পাহাড়ের সারি আর শাশ্বত আকাশ। নাফ দরিয়ার মোহনা ঘেঁষে যে আরণ্যক ভূমি ব্রহ্মদেশ থেকে নিজেকে স্বতন্ত্র করে বঙ্কিম রেখায় ক্রমে এগিয়ে গেছে উত্তর-পশ্চিমে, সে পর্বত অরণ্য সংকুল পৃথিবী ক্রমে সমতল হয়ে গুবাক-নারিকেল বনের ধারে ধারে অশান্ত সাগরের হাত ধরে কোমল হৃদয়া ভীরু নম্র কল্যাণী নারীর মতো নমনীয় হয়ে এসেছে।br তারপর সুন্দরবনের ভয়াল অরণ্যে হয়েছে বিচিত্র। তবু ধন-ধান্যে হয়েছে পুষ্পিত। এই সেই স্বর্ণ প্রসবিনী দেশ বাংলা। কিংবদন্তিতে এর নাম 'সোনার বাংলা'। ইতিহাসের বাদশাহ্ সম্রাটদের ভাষায় 'জান্নাত উল বেলাত।' অতীতের বণিকদের কাছে বাণিজ্য স্বর্গ। এর এক টুকরো মসলিনের বিনিময়ে ইউরোপের সুন্দরীরা দয়িতের কাছে প্রাণমন সমর্পণের শর্ত করত।br মহার্ঘ সেই মসলিন কাপড়ের জন্য সে-দেশের রাজ-রাজড়ারা গননচুম্বী মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতেন। ড়ের জন্য বড় কোমল সরল সহজ এদেশের মাটির প্রাণ। এই সরলান্তকরণ বাংলামাটির রূপ-যৌবন, সম্পদই হল কাল। সিন্ধু শকুনের মতো হার্মাদ আর আরাকানি দস্যুরা ঝাঁপিয়ে পড়ল তার বুকে, লোভে উন্মাদ হয়ে ক্ষতবিক্ষত করল তাকে।
রিজিয়া রহমান বাংলাদেশের প্রথম সারির ঔপন্যাসিকদের মধ্যে একজন। জনু ২৮ ডিসেম্বর। ১৯৩৯ সালে, কোলকাতার ভবানীপুরে। বাবার নাম মরহুম ডা. আবুল খায়ের মােহাম্মদ সিদ্দিক। মা-মরহুমা মরিয়ম বেগম। আদি পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর কয়েক বছর অধ্যাপনায়। নিয়ােজিত ছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন রিসার্চ অফিসার হিসেদ্ধে কাজ করেন। রিজিয়া রহমানের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চলিশের অধিক। শতাধিক ছােটগল্প লিখেছেন তিনি। লেখালেখির অঙ্গনে প্রায় সবগুলাে শাখাতেই তার কলমের স্বচ্ছন্দ বিচরণ । প্রবন্ধ, সমালােচনা, কবিতা, রম্যরচনা ও শিশুতােষ লেখা ছাড়াও দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর সাহিত্য পত্রিকা ত্রিভুজ-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার লেখা অনূদিত হয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন, পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, যশাের সাহিত্য ? পরিষদ পুরস্কার, স্পষ্টবাদী পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক, কমর মুশতরী স্বর্ণপদক, কবি জসিমউদ্দীন পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার, সা'দত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযােগ্য।