নিজের বিষয়ে খুব কমই বলেছেন সতীনাথ। তাঁর ডায়েরিতে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ দেখা যায় কদাচিৎ, স্বজন বা বন্ধুদের কাছেও তিনি মুখ খােলেন অল্পই। কিন্তু তবু নানাজনের স্মৃতিভাবনা থেকে তাঁর বিষয়ে একটা ধারণা করে নিতে পারি আমরা, আর নিজেও তিনি সে-ধারণার খানিকটা ছড়িয়ে রাখেন তাঁর ‘সত্যি ভ্রমণকাহিনী' বইটিতে। উত্তম পুরুষে নয়, পুরাে এই ভ্রমণলিপি তিনি টেনে নিয়ে যান প্রথম পুরুষের ব্যবহারে। এরই মধ্য দিয়ে এমন একজন ব্যক্তিকে আমরা জেগে উঠতে দেখি, যিনি নিজেকে লেখক মনে করেন না কখননা, মনে করেন পাঠক মাত্র, যে-পাঠকের আছে শুধু খুঁটিনাটির উপর ঝোঁক। তাঁর কঠোর যুক্তিবাদী মন বিচার করে দেখতে পায় যে, বই পড়ে তিনি পণ্ডিত হচ্ছেন কেবল, জ্ঞানী নন, তবু ভিতরে ভিতরে তৈরি হচ্ছে একটা সবজান্তা ভাব। বই পড়বার, বই কিনবার বাতিক তাঁর। নিজেকে গ্রন্থকীট ছাড়া ভাবতে পারেন না কিছু। কিন্তু সেই মনের নিবিড়তম উপলব্ধি হঠাৎ টের পান হয়তাে কোনাে সাধারণ মেয়ের কালির এক আঁচড়ে। মেয়েদের মধ্যে তিনি খুঁজে বেড়ান কেবল বাৎসল্য। ভালােবাসেন তিনি মানুষকে আশাবাদী তাঁর মন, ছােটোবেলা থেকে আছে আদর্শবাদের টান। মানুষকে দেখে দেখেই লেখার সঞ্চয় বাড়াবেন তিনি এই তাঁর ইচ্ছে, তাঁর নেই আর কোনাে আকর্ষণ, আর কোনাে সংসারধর্ম। এই হলাে সতীনাথের ব্যক্তিগত পরিচয়।