ক দেশে এক রাজা ছিলেন। তাঁর নাম হবুচন্দ্র। আর তাঁর যে মন্ত্রী ছিলেন, তাঁর নাম গবুচন্দ্র। রাজা ছিলেন বুদ্ধির জালা, আর, মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধির তাল গাছ। দুজনে কেউ কাউকে ছাড়া থাকেন না। রাজা মন্ত্রীর বুদ্ধিতে, রাজ্যে, অবিচার হইবার যো নাই। রাজা হো হো করিয়া হাসেন, মন্ত্রী খো খো করিয়া কাশেন; দিনের বেলা ঘুমান, রাত্রি হইলে দুজনে যত বুদ্ধি আঁটেন। “হো! হো!” “হা! হা!”—দুজনের বুদ্ধি দেখিয়া দুজনে বাহা বাহা করেন। রাজা মন্ত্রীর বুদ্ধির চোটে রাজ্য অস্থির হইয়া উঠিল। রাজা রাজ্যের চারিদিকে দেয়াল তুলিয়া দিয়া রাজত্ব করিতে লাগিলেন। নাকে কানে তূলার ঢিবি দিয়া, মন্ত্রী, সভায় বসিতে লাগিলেন। কি—জানি ! —এমন বুদ্ধি, তার একটুকুও বাহির হইয়া যায়! একদিন ঘোঁৎ ঘোঁৎ করিতে করিতে রাজবাড়ীর পাশ দিয়া এক শূকর যায়। রাজা, দেখিয়া বলিলেন, “মন্ত্রি, ও কি যায় ?” মন্ত্রী অনেকক্ষণ ধরিয়া বেশ করিয়া দেখিয়া বলিলেন,–“মহারাজ, সৰ্বনাশ! মাহুত বেটারা তো সব চোর! ওটা রাজবাড়ীর হাতী, না খাইতে পাইয়া শুকাইয়া শুকাইয়া ছোট হইয়া গিয়াছে।” অমনি রাজা সব বেটা মাহুতকে আনিয়া কয়েদ করিলেন। আবার কতদিন পরে শূকরটা সেইখান দিয়া যায়। রাজা বলিলেন, – “মন্ত্রি! হাতীটা তো এখনও বড় হইল না !” মন্ত্রী আবার দেখিয়া-টেখিয়া বলিলেন, – “মহারাজ! রাজ্য তো ছারেখারে গেল ! এতদিনে ওর শুঁড় গজাইল না, ওটা নিশ্চয় রাজবাড়ীর ইঁদুর, রোজ রাজভাণ্ডার লুটিয়া খাইয়া খাইয়া ইঁদুরটা মোটা হইয়া গিয়াছে!” সর্বনাশ! রাজভাণ্ডার ছারেখারে যাইবে ? যত সিপাইর ডাক পড়িল। তখনি সব বেটা সিপাইর, গর্দান!
Dakshinaranjan Mitra Majumder (১৮৭৭ বাংলা ১২৮৪ বঙ্গাব্দ - ১৯৫৬ বাংলা ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ) প্রখ্যাত বাংলা ভাষার রূপকথার রচয়িতা এবং সংগ্রাহক। তার সংগ্রহিত জনপ্রিয় রূপকথার সংকলনটি চারটি খন্ডে প্রকাশিত যথা ঠাকুরমার ঝুলি,ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদিদির থলে ,এবং দাদামাশয়ের থলে । দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বাংলা ১২৮৪ সালের (১৮৭৭ ইং) ২ রা বৈশাখে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় উলাইল এলাকার কর্ণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম কুসুমময়ী ও পিতার নাম রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার। দক্ষিণারঞ্জনের বাবা রমদারঞ্জন ১৯০২ সালে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিসিমা রাজলক্ষ্মীর কাছে টাঙ্গাইল বসবাস শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলা ১৩৬৩ সালের (১৯৫৬ ইং) ১৬ই চৈত্র কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।