সাহিত্যের সব শাখাতেই প্রমথনাথ স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন। প্রত্যেকটিতেই তিনি তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্য সমালোচনাতে তিনি পাণ্ডিত্যপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ অপেক্ষা সরস রসগ্রাহী মূল্যায়নেরই পক্ষপাতী ছিলেন। বঙ্কিম সাহিত্যের আলোচনা তাঁর রচনার অনেকখানি অংশ জুড়ে আছে। তাঁর সাহিত্য মানসিকতার একদিকে যেমন রবীন্দ্রনাথ, অন্যদিকে তেমনি বঙ্কিমচন্দ্র। সার্থক জীবনরসিকরাই যথার্থ রঙ্গরসিক হতে পারেন। জীবন প্রেমিকরা দুঃখ-সুখের গাথা রচনা করেন, কিন্তু জীবনরসিকরা জীবনকে বিশ্লেষণ করেন। সেই বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিতেই ধরা পড়ে যাবতীয় অসঙ্গতি আর অসংলগ্নতা—যা থেকে জন্ম নেয় হাস্যরস। যথার্থ হাস্যরস সৃষ্টি সাহিত্যে সুস্থতার লক্ষণ সূচিত করে। যে সাহিত্যে হাস্যরস সৃষ্টির স্থান সংকীর্ণ সে সাহিত্য এবং সাহিত্যপাঠকের দুর্ভাগ্যের অন্ত নেই। আমাদের বাংলা সাহিত্যে যথার্থ হাস্যরসের আমদানি করেন বঙ্কিমচন্দ্র। রবীন্দ্রনাথও সাহিত্যের এই রসটিকে উপেক্ষা করেননি। প্রমথনাথও সেই উত্তরাধিকারকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর রচিত রঙ্গ-ব্যঙ্গাত্মক ছোট গল্পের মাধ্যমে। প্রমথনাথের রচনার একটি বড়ো অংশ অধিকার করে আছে রঙ্গ-ব্যঙ্গ। আমাদের এই মিথ্যাপীড়িত সংসারে সত্যবাদী রঙ্গ- ব্যঙ্গের লেখকের যে কী পরিণাম তার সম্বন্ধে তিনি নিজেই তাঁর ‘সদা সত্য কথা কহিবে' গল্পে প্রকাশ করেছেন। ‘একটি ঠোঁটের ইতিহাস'-এ বাঁকা ঠোঁটের জন্য একটি মানুষের বিড়ম্বনার কথাও তো আমরা জানি । কিন্তু তবু আমরা অপেক্ষা করব যুগে যুগে প্রমথনাথের মত বাঁকা ঠোঁটের মানুষ ‘শিল্পশাখা”য় আবির্ভূত হোন। দধীচির আত্মত্যাগে জঞ্জাল-বিধ্বংসী বজ্রের জন্ম হোক।
প্রমথনাথ বিশী ( Pramathanath Bishi, ১১ জুন ১৯০১ - ১০ মে ১৯৮৫) একজন লেখক, শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক। তিনি ১৯৬২-৬৮ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই জুন নাটোর জেলার জোয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার পরিবারে জন্ম। পিতা নলিনীনাথ বিশী ও মাতা সরোজবাসিনী দেবী, স্ত্রী সুরুচি দেবী। ১৯১০ সালে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে এক নাগাড়ে সতের বছর অধ্যয়ন। মেধা, প্রখর বুদ্ধি, অধ্যয়ননিষ্ঠা, কবি-প্রতিভা ইত্যাদি গুণাবলির জন্য রবীন্দ্রনাথের স্নেহ লাভ। তিনি কেরী সাহেবের মুন্সী বইটির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ১০মে, ১৯৮৫ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।এছাড়াও প্রমথনাথ বিশী আনন্দ পুরষ্কার এ ভূষিত হয়েছেন ।