ভূমিকা ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান' কাশীরামের এই অমর উক্তি সারা ভারতে সত্য হইয়া আছে এবং যতদিন ভারত ভারত থাকিবে, ততদিন মহাভারতের কথা প্রত্যেক ভারতবাসীর অন্তরে অমৃত যোগাইবে। কবে কোন্ বিস্মৃত সুদূর অতীতে শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস এই অমর মহাকাব্য রচনা করিয়াছিলেন, তাহার পর হইতে যুগ হইতে যুগান্তরে, ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্তে, কত কবি, কত নাট্যকার, কত সাহিত্যিক, কত সাধু-সন্তজন এই জ্ঞান, তত্ত্ব, কাহিনী ও রসের মহাসাগর হইতে অঞ্জলি তুলিয়া লইয়া নব নব সৃষ্টি করিয়াছেন, সমগ্র প্রাচীন ভারত-সাহিত্য এই মহাভারতের দানে পুষ্ট হইয়া আছে। তাই মহাভারতের কত যে সংস্করণ আছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। দেব সাহিত্য কুটীরের এই মহাভারত বহু বর্ষের বহু গবেষণা ও সঙ্কলনের ফলে গ্রথিত হইয়াছে। মূল বেদব্যাস হইতে আরম্ভ করিয়া কাশীরাম দাস পর্য্যন্ত সমস্ত প্রামাণিক গ্রন্থ মন্থন করিয়া সরস সহজ পয়ার ছন্দে এই মহাভারত রচিত হইয়াছে এবং ইহাতে বহু অধ্যায় সংযোজিত হইয়াছে যাহা সচরাচর বাজার-চলতি মহাভারতে দেখা যায় না। সেইজন্য পণ্ডিতমণ্ডল ও সাধারণের মধ্যে এই মহাভারত সমান আদরে গৃহীত হইয়াছে। এই সংস্করণের বৈশিষ্ট্য ও মহাভারত সম্বন্ধে গবেষণাপূর্ণ আলোচনা এই গ্রন্থের শেষে পরিশিষ্টরূপে দেওয়া হইয়াছে। তাই এই ভূমিকায় সে-সব কথা আর আলোচনা করা হইল না । ভারত শুধু কাব্য নয়, শুধু কাহিনী ও ইতিহাস নয়, ইহা একাধারে কাব্য, পুরাণ, ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, ধর্ম্মতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব। এমন কোন জ্ঞানের বিষয় নাই যাহা মহাভারতে আলোচিত হয় নাই, এমন কোন কাব্য-রস নাই যাহা মহাভারতে পাওয়া যায় না। মহাভারতের মতন চরিত্র-বহুল গ্রন্থও জগতে আর দ্বিতীয় নাই। অসংখ্য চরিত্র এবং প্রত্যেক চরিত্র তাহার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অদ্বিতীয়। বেদব্যাস যে সব মহামহিমান্বিত চরিত্র আঁকিয়া গিয়াছেন, জগতের সাহিত্যে কোথাও তাহার তুলনা নাই। শত শত বর্ষ ধরিয়া সেই সব পৌরাণিক চরিত্র ভারতবাসীর সম্মুখে জ্বলন্ত জীবন্ত আদর্শরূপে বিরাজ করিতেছে। আর এই অসংখ্য অপরূপ ব্যক্তিত্বের মধ্যে কেন্দ্র-পুরুষ হইয়া আছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভারতের অমর ধৰ্ম্মগ্রন্থ গীতাও এই মহাভারতের অন্তর্ভুক্ত। তাই মহাভারতের মহিমার তুলনা নাই। তাই ঋষিবাক্য বলে, যেখানে মহাভারত পঠিত হয়, সেখানে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অধিষ্ঠিত হন। আমাদের চেষ্টা যাহাতে এই পুণ্যগ্রস্ত বাঙালীর ঘরে ঘরে বিরাজ করে।