সাবর্ণি নারদকে রথন্তরকল্প-বৃত্তান্ত-প্রসঙ্গে ব্রহ্ম-বরাহের চরিত ও কৃষ্ণ- মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে যে আঠার হাজার শ্লোকযুক্ত কাহিনী বলিয়াছেন, তাহাই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ৷ শৈবপুরাণের উত্তর খণ্ডে বিবৃত হইয়াছে— “ৰিবৰ্ত্তমান্ ব্রহ্মণস্ত ব্রহ্মবৈবর্ত্তমুচ্যতে”, অর্থাৎ ব্রহ্মার বিবর্ত্তপ্রসঙ্গহেতু এই পুরাণকে ‘ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ' বলা হয় । নারদ পুরাণে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে তাহার ভাবার্থ নিম্নে প্রদত্ত হইল— ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ বেদমাগালুদর্শক দশম পুরাণ। ভগবান সাবর্ণি নারদের নিকট এই পুরাণ ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন। ধর্ম্মার্থকামমোক্ষাদি চতুর্বর্গ এবং হরি- হপ্রীতি ও তাঁহাদের অভিন্নত্ব সম্পাদনই ব্রহ্মবৈবর্ত্তের সম্পাহ বিষয়। রথস্তরকল্পের বৃত্তান্তই বেদব্যাস শতকোটি পুরাণে সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়াছেন এবং ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণকে ব্রহ্ম, প্রকৃতি, গণেশ ও কৃষ্ণজন্মখণ্ড নামে চারিভাগে বিভক্ত করিয়া আঠার হাজার শ্লোকে বিষয় কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। সূত এবং ঋষি সংবাদে পুরাণের উপক্রম হইয়াছে। আদিতে স্বষ্টিপ্রকরণ, পরে নারদ এবং বেধার বিবাদ, উভয়ের পরাভব এবং শিবলোকে গতি, শিব হইতে নারদমুনির জ্ঞানলাভ এবং মহাদেবের বাক্যে নারদ ও মরীচির জ্ঞানলাভার্থ সিদ্ধসেবিত পরম পবিত্র ত্রৈলোক্যাশ্চর্য্যকারী আশ্রমে গমন— এই সমস্ত পাপনাশক কাহিনীই ব্রহ্মখণ্ডের বিষয়ীভূত। প্রকৃতিখণ্ডে সাবর্ণিসংবাদ, কৃষ্ণ-মাহাত্ম্যযুক্ত নানাপ্রকার আখ্যায়িকা, প্রকৃতির আশভূত কলাসমূদয়ের মাহাত্ম্য ও পূজনাদির বিস্তৃতরূপে বর্ণনা রহিয়াছে । গণেশের জন্মপ্রসঙ্গ, পার্বতীর পুণ্যক ব্রত, কার্তিকেয় ও গণেশের উৎপত্তি, কার্তবীর্য্য ও জামদগ্ন্যের অদ্ভুত চরিত্র, গণেশ ও জামদগ্ন্যের ঘোর বিবাদকাহিনী শেষওে স্থান পাইয়াছে ৷ শ্রীকৃষ্ণের জন্মপ্রশ্ন, তাঁহার জন্মকাহিনী, গোকুল গমন, পূতনাদিবধ, বাল্যক্রীড়া, গোপীদের সঙ্গে রাসক্রীড়া, রাধাসহ নির্জ্জনে বিহার, অক্ররসহ অনুরাগমন, কংসাদি বধ, সন্দীপনির নিকট বিদ্যাগ্রহণ, যবনবধ, কৃষ্ণের দ্বারকা- নামান এবং তৎকর্তৃক নরকাসুরাদিবন্ধ কৃষ্ণজন্মখণ্ডে বর্ণিত হইয়াছে।