শ্রীরামকৃষ্ণের ভবতারিণী ও কালীতত্ত্ব স্বামী অচ্যুতানন্দ
শক্তি পীঠ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে স্নানযাত্রা তিথি—কলকাতার উপকণ্ঠে দক্ষিণেশ্বর গ্রামে বিরাট মহোৎসব। জানবাজারের রানী রাসমণি তাঁর স্বপ্নদৃষ্ট দেবী আদ্যাশক্তির ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এক অভিনব দেবালয়; যেখানে একই পরিসরে দেবী মহাকালী-জগদীশ্বরী, পাশেই রাধাকৃষ্ণ ও পশ্চিমে দ্বাদশ শিবালয়। শৈব, শাক্ত ও বৈষ্ণব বিগ্রহত্রয়ের অপূর্ব সমাবেশ। তার ওপরে এই মন্দিরভূমিটি একটি মুসলমান কবরডাঙা সংলগ্ন—উত্তরে আবার এক ইংরাজের আবাসস্থল। সমগ্র ক্ষেত্রটি কূর্মপৃষ্ঠাকৃতি, তন্ত্রের শক্তি পীঠের প্রশস্ত ক্ষেত্র ।
কৈবর্ত্যের মন্দির এহেন অপূর্ব দেবভূমির প্রতিষ্ঠাকার্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দৈব ইচ্ছায় সেটিও সুসম্পন্ন হয় এক উদারমনা ব্রাক্ষ্মণ পণ্ডিত, শ্রীরামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তিসমৃদ্ধ শাস্ত্রবিধানে। তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীরামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়-এর জন্যই যেন এই মন্দির ও তার বিগ্রহগুলির সৃষ্টি। দেবতার অমোঘ নির্দেশে রানী রাসমণি এই মন্দির স্থাপিত করেন—ভবিষ্যতের সর্বধর্মের সমন্বয়কারী যুগদেবতা সচ্চিদানন্দ পরব্রহ্ণের নরবিগ্রহ শ্রীরামকৃষ্ণের নরলীলার প্রকাশক্ষেত্র হিসাবে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠার দিনটিতে ও পূর্ব দিনে যুবক শ্রীরামকৃষ্ণ বা গদাধর চট্টোপাধ্যায় খুব প্রসন্নমনে এই অনুষ্ঠানের সব কিছু গ্রহণ করতে পারেননি। পারিবারিক ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে এই প্রথম দিনটিতে তাঁর বড় ভাই-এর সঙ্গে এখানে টেনে আনলেও এখানে কৈবর্ত্যের মন্দিরের অন্নপ্রসাদ গ্রহণে প্রতিনিবৃত্ত করেছিল। কিন্তু মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী দেবী মহাকালীর অপরূপ মূর্তি তাঁর মনকে আপ্লুত করেছিল নিশ্চয়ই। সেদিন উৎসব শেষে তিনি কলকাতায় তাঁর সাময়িক আবাসে ফিরে যান। পরদিন সকালে দক্ষিণেশ্বরে ফিরে আসেন দাদার খোঁজ নিতে। কিন্তু বুঝতে পারেন—দাদা মায়ের মন্দিরের পূজারীর পদে পাকাপাকিভাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। গদাধর ঝামাপুকুরে ফিরে যান। সপ্তাহকাল পরে আবার আসেন দক্ষিণেশ্বরে । এবার দাদার সনির্বন্ধ অনুরোধে ও ধর্মপত্র অনুষ্ঠানের ফলে গঙ্গার তীরে স্বপাক আহার করে দক্ষিণেশ্বরেই থেকে যেতে বাধ্য হন। ক্রমে রানীর জামাই মথুরানাথ বিশ্বাস-এর দৃষ্টিতে গদাধরের মূর্তি নির্মাণ ক্ষমতা, সুদর্শন চেহারা ও সুমধুর সঙ্গীত এক বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। বুদ্ধিমান দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মথুর গদাধরকে আস্তে আস্তে প্রথমে মায়ের বেশকারীর পদে নিযুক্ত করতে পেরেছিলেন। এই কাজে গদাধর মাকে সাজাবার অবকাশে তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ সেবার সুযোগ পেলেন। মায়ের রূপ তাঁর মনকে ধীরে ধীরে তাঁর তত্ত্ব ও লীলার জগতে পৌছে দিতে লাগল। মন্দির প্রতিষ্ঠার তিনমাসের মধ্যেই ঠাকুর মায়ের বেশকারীর পদে আসেন। এরপরে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বিষ্ণুমন্দিরে দুর্ঘটনার পরে ঠাকুর বিষ্ণুমন্দিরে পূজকের পদ গ্রহণ করেন। কয়েকমাস এই পূজার পরে রামকুমারের বার্ধক্যজনিত দুর্বলতাবশতঃ ঠাকুরই মা কালীর পূজার ভার গ্রহণ করেন ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে।
মন্দির ও বিগ্রহ এই সুযোগে দেবী ভবতারিণীর মন্দির ও বিগ্রহের কথাও একটু স্মরণ করে নেওয়া যাক।
দেব সাহিত্য কুটীর বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা কাল ১৮৬০৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সবজ্যিনপ্রিয়৷ এছাড়া শিশু ও কিশোর পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা রড়দের এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি মাসিক পত্রিকা শুকতারা যা ৭০ রৎসরেও সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ আর ৫৮ বছর ধরে রড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীরইঁ এখনও এক এবং অদ্বিভীয়৷