আজকের প্রাতরাশটা হয়েছিল পুরোদস্তুর পূর্ণভোজনের সামিল। চায়ের পেয়ালায় অন্তিম চুমুক দিয়ে এবং একটি আরামসূচক ‘আঃ’ শব্দ উচ্চারণ করে একটা মোটাসোটা চুরোট ধরিয়ে ফেললেন ডিটেকটিভ ইনস্পেক্টর সুন্দরবাবু। দৈনিক প্রভাতী খানাপিনার অব্যবহিত পরেই উল্লেখযোগ্য সংবাদ পরিবেশনের ভার ছিল মাণিকের উপরে। সে সামনের টেবিলের উপর থেকে টেনে নিলে খবরের কাগজখানা । জয়ন্ত বার করলে তার রূপোর শামুকের নস্যদানী! সে একটিপ নস্য নাসিকার সাহায্যে আকর্ষণ করতেই সুন্দরবাবু বিকৃত মুখে বলে উঠলেন, “হুম্! তোমার ঐ নোংরা সেকেলে নেশাটা তুমি কি কস্মিন্কালেও ছাড়তে পারবে না হে?” জয়ন্ত বললে, “কে বলে নস্য সেকেলে নেশা? সব ব্যাপারেরই উঠতি-পড়তি আছে, নস্যের ও রেওয়াজ মাঝে কিছু কমে গিয়েছিল বটে, কিন্তু পাশ্চাত্ত্য দেশে নস্যের চলন আবার নতুন করে সুরু হয়েছে। আপনি জানেন কি, এক ইংলণ্ডেই বৎসরে পঁয়ষট্টি লক্ষ টাকার নস্য তৈরি হয়?” হুস্ করে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে সুন্দরবাবু বললেন, “হুম্, বল কি হে? খামকা আধকোটি পনেরো লাখ টাকা নস্যসাৎ! বড়ই বড়ই, বড়ই অন্যায়!” —“আজ্ঞে হ্যাঁ। নস্য নোংরা নয় মশাই, নস্য হচ্ছে রাজকীয় নেশা, তার আভিজাত্য অতুলনীয়। নস্যের উৎপত্তি আমেরিকায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে দ্বিতীয়বার সেখানে গিয়ে কলম্বাস তার ব্যবহার দেখে এসেছিলেন। ষোলো শতাব্দীতে নস্যের আমদানি হয় য়ুরোপে। তারপর সেখানকার বড় বড় রাজা, রাণী, সেনাপতি, আমীর-ওমরাও, রাজনৈতিক, কবি, শিল্পী, অভিনেতা—এমন কি সাধু- সন্ন্যাসী পর্য্যন্ত নস্যের সেবাইত হয়ে পড়েন। আমি তো তুচ্ছাদপি তুচ্ছ, দিগ্বিজয়ী নেপোলিয়নের মতন ব্যক্তিও ছিলেন নস্যগতপ্রাণ। তাঁর সোনার নস্যদানী ছিল অসংখ্য, সেগুলিরও মোট দাম হবে লক্ষাধিক টাকা। নস্যের এত কদর কেন শুনবেন ? ” সুন্দরবাবু গাত্রোত্থান করে বললেন, “না ভাই, এখন আমার নস্য-কাহিনী শোনবার ফুরসৎ নেই।” – “কেন, ত্বরা কিসের ?” —“তদন্ত।” – “কিসের তদন্ত?” —“আত্মহত্যার। এক ভদ্রলোক পুত্রশোকে আত্মহত্যা করেছেন। বিশেষ হন্তদন্ত হতে হবে না, কারণ জোর তদন্ত নয়, একান্ত সহজ মামলা। তবু একবার যেতে হবে।” –“আপনার হাতে ঐ খামখানা কিসের ?” —“এর মধ্যে ঘটনাস্থলের আর লাসের খানকয় ফোটো আছে।” —“একবার দেখি না !” ফোটোগুলো নিয়ে জয়ন্ত খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করে যেন নিজের মনেই বললে, “মৃতদেহের ডানহাতে রয়েছে একটা রিভলভার। ঐটেই বোধহয় আত্মহত্যার অস্ত্র। ডানহাতের মণিবন্ধে দেখা যাচ্ছে একটা হাতঘড়িও।” সুন্দরবাবু বললেন, “কোন কোন খেয়ালী লোকের ডানহাতেই থাকে হাতঘড়ি।”
দেব সাহিত্য কুটীর বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা কাল ১৮৬০৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সবজ্যিনপ্রিয়৷ এছাড়া শিশু ও কিশোর পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা রড়দের এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি মাসিক পত্রিকা শুকতারা যা ৭০ রৎসরেও সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ আর ৫৮ বছর ধরে রড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীরইঁ এখনও এক এবং অদ্বিভীয়৷