"তুরস্কের রূপকথা"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: কেন আমরা আজও রূপকথার গল্প ভালােবাসি? নিশ্চয়ই এর কারণ আছে। রূপকথা হচ্ছে মাটি ও মানুষের গল্প | এর নির্দিষ্ট করে কোনাে লেখক নেই। কে বা কারা পুরনাে দিনের রূপকথা তৈরি করেছেন তা জানারও কোনাে উপায় আজ নেই। তবে রূপকথা ব্যাপক অর্থে লােকসাহিত্যের অন্তর্গত। তাই রূপকথার মধ্যে পাওয়া যায় জনজীবনের গন্ধ, ভৌগােলিক পরিবেশের স্পর্শ এবং ইতিহাসের বর্ণ। এমনিতে রূপকথার গল্প খুব সরলরেখায় চলে। কাহিনীর মধ্যে থাকে টানটান নাটকীয়তা। অধিকাংশ গল্পেই ভালাে ও মন্দের লড়াই থাকে। তবে গল্পের শেষে ভালাের জয় হয়। রূপকথার গল্পে কোনাে ঘােরপ্যাচ থাকে না। এর পরিসমাপ্তি হয় খুব সুন্দরভাবে। আমরা তাে যে কোনাে গল্পের সুন্দর সমাপ্তি প্রত্যাশা করি। রূপকথার গল্পে সত্য-অসত্যের লড়াই, ন্যায়-অন্যায়ের লড়াই, শুভ-অশুভের লড়াই চলতে থাকে নিরন্তর। দেখতে পাই সব গল্পেই শুভ, সুন্দর ও কল্যাণের জয়। রূপকথার গল্পে দুষ্ট লােকের পরাজয় অবধারিত। হয়তাে এ সব কারণেই রূপকথার গল্প চিরন্তন। পৃথিবীর সকল জাতির শিশু-কিশােরের কাছেই সমানভাবে আদরণীয়। রূপকথার গল্পের আবেদন তাই কখনােই ফুরিয়ে যায় না। | যে জাতির ঐতিহ্য যত সমৃদ্ধশালী তাদের লােকসাহিত্যও তত ধনবান। যে জাতির গৌরবের ইতিহাস আছে, যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস আছে, সুখী মানবজীবনের ইতিহাস আছে সেই জাতির গল্পও তত সুন্দর। সেই জাতির রূপকথাও সমৃদ্ধ হতে বাধ্য। তুরস্ক অতীত গৌরবে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ইউরােপের কোলে দুলতে থাকা ছােট্ট এই দেশটিতে অনেক পুরনাে কাল থেকে মানববসতি রয়েছে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যায়, অতীত গৌরবের বলে বলীয়ান হয়ে তুর্কিরা এশিয়া ও ইউরােপের অনেক ভূখণ্ডে সামরিক ও সাংস্কৃতিক অভিযান করেছে। ছড়িয়ে পড়েছে দেশ হতে দেশান্তরে। পুরনাে জাতি বলেই তুর্কিদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে অনেক গল্প-গাথা। এরই মধ্যে থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর রূপকথার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তুর্কি রূপকথা পৃথিবীব্যাপী সম্মানের আসন পেয়েছে। তুরস্কের পুরাণ কিংবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত গল্পগুলাের মধ্য থেকেই কয়েকটি রূপকথার গল্প বাছাই করা হয়েছে এই বইয়ে। বলে রাখা ভালাে, তুরস্ক ভূখণ্ডে অজস্র লােককাহিনী ভিত্তিক গল্প ছড়ান আছে। সে-সব গল্পের মণিমুক্তো একটা বইতে তুলে আনা সম্ভব নয়। তাই তুরস্কের রূপকথা প্রতিনিধিত্বশীল কয়েকটি রূপকথার গল্পের সংকলন। | তুরস্কের লােককাহিনী আলােচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে নাসিরউদ্দিন হােজ্জার কথা আসে। হােজ্জা চরম চালাক এবং চরম বােকা একজন চরিত্র। ছােট ছােট কৌতুককর গল্পের মধ্যে মিলেমিশে থাকে মানবমনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা। হােজ্জার গল্প পৃথিবীব্যাপী দারুণ জনপ্রিয়। তুরস্কের লােককাহিনীতে হােজ্জার গল্প একটি বড় অংশ জুড়ে আছে।। রূপকথার গল্পের স্বভাব পরিব্রাজকের মতাে। এই গল্পগুলাে একদেশ থেকে আরেক দেশে নিরন্তর পরিভ্রমণ করেছে। তাই দেখা যায় একই গল্প বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমভাবে প্রচলিত রয়েছে। এর একটি বড় উদাহরণ সিন্ডারেলা গল্পটি। ইউরােপের প্রতিটি দেশেই এই গল্পটি মর্যাদার সঙ্গে অভিষিক্ত। কিন্তু সব দেশেই যে গল্পটি একই রকমভাবে প্রচলিত রয়েছে এমনটি বলা যাবে না। রূপকথার গল্পের এই বিবর্তন ধারাটি খুব মজার। তুরস্কের গল্পগুলাের মধ্যেও এই বিবর্তনের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি, কোনাে কোনাে গল্প পড়ে মনে হয়, এ যেন বাংলার রূপকথা। বাংলার গল্পের সঙ্গে এই গল্প যেন অভিন্ন ও এক। শুধু পালটে গেছে চরিত্র ও ভূগােল।। | ‘তুরস্কের রূপকথা প্রকাশিত হল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রূপকথা সিরিজের আওতায়। রূপকথার গল্প শিশু-কিশাের মনকে দীপান্বিত ও সুন্দর করে তুলবে এ কথা বলা বাহুল্য। বইটি অন্যান্য দেশের রূপকথার গল্পের বইয়ের মতােই তােমাদের ভালাে লাগবে, সে প্রত্যাশা করি।
জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা । পিতা প্ৰয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্ৰয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক । শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান স্বচ্ছন্দ। ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে খামখেয়ালি ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমী আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পরে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও পাঁচবার । এ ছাড়াও পেয়েছেন সিকানন্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কার (২০০৭), ছোটদের মেলা পুরস্কার (২০০৯/২০১০), জাতীয় ছড়া উৎসব। ২০১১ সম্মাননা, শামসুর রাহমান সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) এবং ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল পুনর্মিলনী সম্মাননা। ২০১১ । কলকাতা থেকে অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকাশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্ৰকাশিত হয়েছে । দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর-তরুণদের উৎকর্ষধ্যমী মাসিক আসন্না-র । অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কিশোরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন। পাঁচ বছর । বর্তমানে চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত। সাপ্তাহিক-এর প্রকাশকও তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা-সদস্য। প্রিয় শখ পুরোনো বই ও চিত্ৰকলা সংগ্ৰহ, বইপড়া, দাবাখেলা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা ।