অনেক কাল আগে সুন্দরবনের লাগোয়া একটি গ্রামে বেরাহিম নামে এক ফকির বাস করতেন। সেই ফকিরের স্ত্রীর নাম ফুলবিবি। ফুলবিবি নিঃসন্তান বলে বেরাহিম আরেকটি বিয়ে করবেন বলে মনস্থ করলেন। কিন্তু বেরাহিমের সিদ্ধান্তের কথা শোনামাত্রই ফুলবিবি বেঁকে বসলেন। না, সতীন নিয়ে তিনি ঘর করতে পারবেন না। তাঁর কান্না দেখে বেরাহিম সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আরেকটি বিবি এলেও ফুলবিবির কোনো কথা অমান্য করবেন না তিনি। তাঁর ঘরে ফুলবিবি যা বলবেন তাই হবে। এই কথা পেয়ে ফুলবিবি ফকিরের আরেকটি বিয়েতে রাজি হলেন। বেরহামও তাঁর দ্বিতীয় বিবি ঘরে নিয়ে এলেন। এঁর নাম গুলালবিবি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই গুলালবিবি সন্তানসম্ভবা হলেন। সতীন মা হবেন—এ কি সহ্য করা যায়? সুতরাং ফুলবিবি এবার নিজের রূপ ধরলেন। তিনি ফকিরকে ডেকে বললেন, 'দেখো, আমার ইচ্ছা গুলালবিবিকে বনবাসে দিতে হবে। তুমি বলেছিলে আমার কোনো কথা অগ্রাহ্য করবে না। আমার এই কথা তোমাকে রাখতে হবে।' ফুলবিবির কথা শুনে ফকিরের মাথায় হাত। তিনি কত বোঝান, কিন্তু ফুলবিবি নিজের সিদ্ধান্তে অটল। ফকির আর কী করেন ফুলবিবির কাছে নিজের দুঃখ গোপন করে গুলালবিবিকে বনবাসে দিলেন । সুন্দরবনের বাদাতে গুলালবিবি যমজ সন্তানের জন্ম দিলেন—একজন বনবিবি আর অপর জন তার ভাই সাজঙ্গলি। আল্লা মেহেরবানের দয়ায় গুলালবিবি তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে সেই জলাভূমিতে বাস করতে লাগলেন। কিছুদিন পর ফকির নিজের ভুল বুঝতে পেরে গুলালবিবি আর সন্তানদের ঘরে নিয়ে যেতে এলেন। গুলালবিবি কিন্তু ফকিরের সঙ্গে ফিরে গেলেন না। তিনি জানালেন তাঁর পুত্রকন্যা আল্লা মেহেরবানের দয়া পেয়েছে। এখানেই তাঁরা বাস করবেন এবং এখানে থেকে তাঁরা মানুষের দুঃখ দূর করবেন । সুন্দরবন বা বাদাবনের অধিকর্তা হলেন দণ্ডবক্ষ মুনি। দণ্ডবক্ষ মুনি শিবের অংশ আর তাঁর স্ত্রী নারায়ণী হলেন দেবী দুর্গার অংশ। দণ্ডবক্ষ মুনি আর নারায়ণীর পুত্র হলেন দক্ষিণরায়। দক্ষিণরায় খুব অত্যাচারী। বনের যত মধু আর কাঠ তাঁরই প্রাপ্য। ব্রাহ্মণ দক্ষিণরায় বাঘের রূপ ধরে মানুষ ধরে আনেন। নরবলি ছাড়া তাঁর পূজা হয় না। দক্ষিণরায়ের অত্যাচার ক্রমে ক্রমে বেড়ে চলে। কেউ আর জঙ্গলে কাঠ বা মধু সংগ্রহ করতে পারে না।