প্রশ্নকেই উত্তরে পরিণত করার ঐতিহ্য ভারতবর্ষের অনাদি অতীত থেকে চলে আসছে। প্রজাপতি সৃষ্টির শুরুতে নিজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবলেন ‘কে আমি?’ ‘কঃ”? তাই তাঁর নাম হল ‘ক’। ক’-য়ে ‘কাল’ ক’-য়ে ‘কল্পনা’। ‘ক’-য়ে ‘কবি’। কোন সেই অব্যক্তপ্রকৃতি জন্তু, কলায় কলায় চাঁদের সঙ্গে যে বাড়ে কমে? মিনিট-নিমেষগুলি যার লোম। শুক্ল আর কৃষ্ণপক্ষ যার সাদা কালো দুটি চোখ। ক্ষণে ক্ষণে যে পালটাচ্ছে। আর আমরা, যারা তার পিঠে বসে আছি, তাদেরকে উথালপাথাল নিয়ে চলেছে কোথায় কে জানে? এই দুরন্ত ঘোড়াটির কল্পনা করেছেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস মহাভারতের শান্তিপর্বে। নাম দিয়েছেন বয়ো-হয়ঃ বয়স-ঘোড়া। সেই ঘোড়ার তিন অবস্থা। সমকাল, গতকাল আগামী কাল— এই তিন কালকে নিয়ে আর কল্পনার রাজনীতি নিয়ে এই বইটিতে গুছিয়ে ভাববার চেষ্টা করা হয়েছে। যার যাত্রার ধ্বনি কব্জিতে হাত রাখলে অথবা বুকে কান পাতলেই শোনা যায়, সেই কালই এখন ঘোড়া ও ঘড়ির রূপ ছেড়ে ‘ব্যস্ততা’ নামে এক দুরারোগ্য ব্যাধি সেজে আমাদের ক্লান্ত করছে, ক্লান্ত করছে। কালে কালে আমাদের বাড়বাড়ন্তই আমাদের কাল হয়েছে। বাংলায় যুক্তি তক্কো চলে না কেবল গপ্পোই চলে— এই মিথ্যে রটনার মুখে ছাই দিয়ে দার্শনিক চিন্তাতেও কান্তি আনার এই প্রয়াস। ক’য়ে ‘ক্লান্তি’ নয়, ক’য়ে ‘কান্তি’। শেষ অধ্যায়ে কেবলই পড়ে যাওয়ার কথা। পড়ে কী হবে, কে জানে?