"মুজিবের রক্ত লাল" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া: ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ভয়াবহ কালরাত্রি। এই দিন ভাের রাতে বাঙালি জাতির পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়। ষড়যন্ত্রকারী আর খুনীর দল ক্ষমতা দখলের পর নানাভাবে বুঝাতে চেয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ব্যাপারটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। কথাটা আমি বিশ্বাস করি না। | বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্যকে বিনষ্ট করার জন্য বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের সমর্থনে এক সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। ‘মুজিবের রক্ত লাল’ পুস্তকে মােটামুটিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের পটভূমি বর্ণনা করা ছাড়াও কীভাবে হত্যাকাণ্ড সমাধা হয়েছে তার বিবরণ দেয়া হয়েছে। নানা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলােকে পুরাে ব্যাপারটা পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পর্দার অন্তরালে যাঁরা অত্যন্ত সঙ্গোপনে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ভূমিকা প্রকাশ করতে হলাে। ভবিষ্যতে ঐতিহাসিকরা এসবের সত্যতা সঠিকভাবে নিরূপণ করবেন। বঙ্গবন্ধুর দাফন এবং হত্যার বিবরণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বাঙালি সাংবাদিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কাহিনীকারে এই পুস্তকে নিজের জবানীতে লিখেছি।
(জন্ম: ৯ আগস্ট, ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৬ জুন, ২০০৪) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের চরমপত্রের পরিচালক, লেখক ও কথক ছিলেন। 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সাহস, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল৷ সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার থেকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি একজন কলামিষ্ট৷ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি৷ আর আখতার মুকুল ১৯৪৫ সালে দিনাজপুর মহারাজা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি দিনাজপুর রিপন কলেজ(ব্রাঞ্চ) থেকে আই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৪৭ সালে৷ ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তিনি ১৯৪৮ সালে জননিরাপত্তা আইনে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং ১৯৪৯ সালে জেলখানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন৷ ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন৷[৩] ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈঠকের সময় যে ১১ জন ছাত্রনেতা উপস্থিত হন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। অন্যান্যরা ছিলেন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক, মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সুলতানা, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মোমিন, এস এ বারী এটি, সৈয়দ কামরুদ্দীন হোসেইন শহুদ, আনোয়ারুল হক খান, মঞ্জুর হোসেন, আনোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এম আর আখতার মুকুল সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন৷ সাপ্তাহিক 'নও বেলাল', 'পাকিস্তান টুডে' , দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ইত্তেফাকের জন্মলগ্ন থেকে ১৯৬০ সালের জুলাই পর্যন্ত এই পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬১ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এম আর আখতার মুকুল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইউডিআই-এর ঢাকাস্থ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন৷ একই সঙ্গে তিনি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় এবং পরে দৈনিক পূর্বদেশেও চাকুরী করেন৷ এম আর আখতার মুকুল ১৯৭১ সালে প্রবাসী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে যোগদান করে তথ্য ও প্রচার দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান৷ ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়রি তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে এম আর আখতার মুকুল দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন৷