জাহির আরবি শব্দ, অর্থ সুস্পষ্ট। লেখক এখানে গল্পচ্ছলে নিজ জীবনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। লেখকের হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী এসথারের জন্য বিশেষ অনুসন্ধান। স্ত্রীর অন্তর্ধানের ব্যাপারে পুলিশ তাঁকে। আটকে রাখা দিয়ে এই উপখ্যানের শুরু। স্ত্রীর অন্তর্ধানের ফলে লেখক তাঁর নিজের জীবনে বিবাহের ব্যাপারটাকে পুনরায় পরীক্ষা করতে বাধ্য হন। এসথারের অন্তর্ধানের সবরকম সম্ভাব্য দিক বিবেচনা করে বুঝতে পারেন এক তরুণ যুবকের সাথে তাঁর স্ত্রী পাড়ি জমিয়েছে। তার একটি বই উদ্বোধনের সময় মিখাইল, এসথারের এক বন্ধু দেখা করতে আসে। জানায়; যুদ্ধের সংবাদদাতা এসথারের খোজ তার কাছে রয়েছে। কিন্তু এসথারকে খুঁজে পেতে হলে আগে নিজেকে খুঁজে পেতে হবে। মিখাইল নিজেও একজন গল্পকথক। মিখাইলের দলের লােকেরা ভিন্নরকমের, ভিন্ন তাদের ধ্যান ধারণা। ভবঘুরে থেকে ভিক্ষুক সবাই মিখাইলের বিশ্বাস ও রীতিনীতিতে মুগ্ধ। লেখক এরই মধ্যে মেরী নামে একজন অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েন। তার বর্তমান প্রেমিকা মেরী সতর্ক করেন মিখাইল একজন মৃগী রােগী হতে পারে। গল্পকথক নিজেও ধন্ধের মধ্যে পড়লেও মিখাইলের সঙ্গ পছন্দ করেন। মিখাইলের সাথে ভবঘুরে ভিক্ষুকদের দলে ভিড়ে জাহির অনুসন্ধানে ব্যপ্ত হন। অবশেষে লেখক জহির বা এসথারের সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ফ্রান্স, প্যারিস থেকে কাজাখস্থান। সেখানে কার্পেট বুননরত এসথারের দেখা পেলেও এসথার তখন লেখক থেকে অনেক দুরে। অবশেষে গল্পকথক তার জহির পূরণ করেন। প্যারিস থেকে কাজাখস্তান যাত্রার মাধ্যমে পাওলাে কোয়েলহাে ‘দ্য জাহির’ উপন্যাসে প্রেম, বিয়ে এবং জীবনের বিভিন্ন অর্থ খুঁজে বেড়ান।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।