"লোকায়ত দর্শন" বইটির ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া: মানুষ চতুর্ভূত-বিশিষ্ট দেহ ছাড়া কিছুই নয়—মৃত্যুর পর এই চতুর্ভূত প্রকৃতিতেই প্রত্যাবর্তন করে, কিছুই বাকি থাকে না। এ-জাতীয় বক্তব্যের সঙ্গে অন্তত মাধববর্ণিত লােকায়ত মতের সাদৃশ্য আছে ; কেননা মাধবের বর্ণনা অনুসারে লােকায়তিকেরা যাগযজ্ঞকে সম্পূর্ণ নিষ্ফল মনে করেন এবং বলেন, ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ ? কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি, মাধবের ওই লােকায়ত-বর্ণনা সংশয়াতীত বলে গ্রহণ করাও নিরাপদ নয়। তাছাড়া, সামান্যফল সুত্ত-বণিত অজিতের মতের সঙ্গে মাধৰ-বর্ণিত লােকায়ত-মতের সাদৃশ্য আংশিকমাত্র, অজিতের অন্যান্য মন্তব্যের সঙ্গে মাধব-বর্ণিত লােকায়তের মিল নেই। অজিতের মতে ইহলােকও নেই, পরলােকও নেই। মাতা নেই, পিতা নেই এবং তজ্জাত-নয় এমন কোনাে সত্তাও নেই। শ্রমণ নেই, ব্রাহ্মণ নেই ; জ্ঞান নেই, জ্ঞানের উপদেশ নেই। দেহাতিরিক্ত সত্তা বলেও কোনাে কিছু নেই; শুশানগমনেই সবকিছুর চুড়ান্ত পরিণতি। এ-জাতীয় মতবাদকে লােকায়তিক না বলে বরং চুড়ান্ত অর্থে সন্দেহবাদ বা scepticism আখ্যা দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত। বস্তুত, রিস-ডেভিডসও১ ১ ৩ 'অজিতের মতকে লােকায়তিক না বলে the view of a typical sophist হিসেবেই ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন।
Debiprasad Chattopadhyaya (জন্ম: ১৯ নভেম্বর, ১৯১৮ - মৃত্যু: ৮ মে, ১৯৯৩) ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তার সবচেয়ে বড় কাজ হল লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা করেন এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও শ্রুশ্রুত সম্পর্কে।