ঈশপ নামের এই মহান ব্যক্তিটি সম্পর্কেও এখন আর বেশি কিছু জানবার উপায় নেই। তাঁর জীবনচরিত্রের প্রায় সবটাই হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতলগর্ভে। শোনা যায়, তিনি ছিলেন একজন সামান্য ক্রীতদাস। আবির্ভাবকাল অনুমান করা হয় ৬২০ থেকে ৫৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভেতর। এক ধনী লোকের সদ পয়সায় কেনা গোলাম ছিলেন। দেখতেও কুৎসিত এবং কৃষ্ণকায়। কিন্তু এর মধ্যেও একটি গুণ ছিল। বানিয়ে বানিয়ে মজার সব গল্প বলার অসাধারণ শক্তি ছিল তাঁর। যখন-তখন অবলীলায় গল্প তৈরি করতে পারতেন। লোকেরা তাঁর গল্প শুনে মুগ্ধ হয়ে যেত। তাঁর বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, গল্পের চরিত্রদের অধিকাংশই ছিল ইতর প্রাণীবিশেষ। বনজঙ্গলের বাঘ, ভালুক, হরিণ, কুকুর, বিড়াল, পাখি-এরাই ছিল তার গল্পের চরিত্র। এরাই তাঁর গল্পে কথা বলত মানুষের মতো। তাঁর গল্পের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো, গল্পের শেষে আছে সুন্দর একটি উপদেশবাণী। চমৎকার আদর্শের কথা। আসলে গল্প নয়-এই আদর্শের কথাটাকে শোনানোর জন্যই তিনি ওটাকে গল্পের আবরণে সুন্দর করে পরিবেশন করতেন। সুন্দর সুন্দর গল্পের জন্যই হয়তো তাঁর সময়কার সবাই এই কুৎসিত কেনা গোলামকে ভালোবাসত। শ্রদ্ধাও করত। ধীরে ধীরে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। অবশেষে মনিব তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন। শুধু তা-ই নয়, মনিব নিজেই ঈশপকে নিয়ে আসেন গ্রিসের লিভিয়া রাজ্যের রাজা ক্রোসাসের রাজদরবারে। পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় রাজার সঙ্গে। ক্রীতদাস ঈশপ ঠাঁই পেলেন দরবারের অন্যতম সভাসদ হিসাবে। এখানে কিছুদিন থাকার পর রাজা ক্রোসাস ঈশপকে ডেলফি নামক স্থানে অ্যালোলোদেবের মন্দিরে প্রেরণ করেন। ঈশপ ছিলেন একেবারে নিরব। তিনি যেমন গল্প বলতেন, তার সবই মুখে-মুখেই তৈরি করতেন। তারপর শোনাতেন শ্রোতাদের এভাবেই প্রচলিত হতে থাকে তাঁর গল্পগুলো। ঈশপের মৃত্যুর প্রায় দুশো বছর পরে এথেন্সবাসীরা তাঁর গল্পগুলোকে সংগ্রহ করে প্রথম গ্রন্থিত করার চেষ্টা চালান। এরপর গ্রিসের বাবরিয়াস নামের এক পণ্ডিতও অনুরূপ একটি গল্পের সংগ্রহ প্রকাশ করেন। পণ্ডিত বাবরিয়াস যে প্রচেষ্টা চালান, সেটি ছিল এক সত্যনিষ্ঠ গবেষণার কাজ। এতে ঈশপের প্রায় সমস্ত গল্পই সংকলিত হয়েছিল। ১৮৪৪ সালে গ্রিসের মাউন্ট অ্যাথোসের একটি গ্রন্থশালা থেকে পণ্ডিত বাবরিয়াসের সংকলিত ঈশপের গল্পের বইয়ের একটি কপি আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে নানা ভাষায় ঈশপের যে গল্প প্রচলিত হয়েছে, তা এই বাবরিয়াসের গ্রন্থ থেকেই সংগৃহীত। বাংলা ভাষাতেও ঈশপের গল্পের বহু সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।
ভবেশ রায়ের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই ঢাকা জেলার ধামরাই থানার বাইশাকান্দা গ্রামে। শিক্ষাজীবন শুরু গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তার পর কুত্তরা আব্বাস আলি হাইস্কুলে। ইন্টারমিডিয়েট করটিয়া সাদৎ কলেজে। স্নাতক ঢাকার জগন্নাথ কলেজে এবং স্নাতকোত্তর (বাংলা সাহিত্য) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। অধুনালুপ্ত দৈনিক সমাজ পত্রিকার ফিচার এডিটর ছিলেন। তারপর সমবায় কর্মকর্তা (জনসংযোগ কর্মকর্তা) হিসেবে ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। বর্তমানে সাৰ্বক্ষণিক লেখালেখি করেন। প্ৰকাশিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। কিশোর বিজ্ঞানের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক ।