"হিমালয়ের পথে পথে " বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: হিমালয় সম্বন্ধে মানুষের কৌতূহল আবহমান কাল থেকে। যে অঞ্চল যত দুর্গম, সেই অঞ্চল তত মােহনীয় কল্পরূপ নিয়ে মানুষের মনে আসন পেতেছে। মানুষ নানা পৌরাণিক কাহিনী, নানা বাস্তব-অবাস্তব উপকথা গড়ে তুলেছে এই হিমালয়কে ঘিরে। বহু ভ্রমণকারী হিমালয়ের নানা অঞ্চলের বর্ণনা করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ-গ্রন্থে —কেউ এঁকেছেন তার মােহিনীরূপ, কেউ এঁকেছেন তার রুদ্র করাল মূর্তি। কিন্তু বাংলা ১৩৬২ সালে উমাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়ের প্রথম ভ্রমণকাহিনী যখন প্রকাশিত হল তখন হিমালয় আর এক নূতনতর মূর্তিতে উদ্ভাসিত হল পাঠকের কাছে। হিমালয় হল যেন মানুষের ভালবাসার জন, তার ঘনিষ্ঠ নিকট আত্মীয়। এই হিমালয় তার সমস্ত রহস্য ও রােমাঞ্চের আকর্ষণ দিয়ে এক অপ্রতিরােধ্য টানে। পাঠককে নিয়ে যায় তার অন্দরমহলে। এই কারণেই হিমালয়-পর্যটকদের মধ্যে উমাপ্রসাদের পাঠকসংখ্যা সর্বাধিক। “হিমালয়ের পথে পথে” গ্রন্থে হিমালয়ের। তিনটি বিখ্যাত অথচ স্বল্প-অভিযাত্রী-স্পষ্ট অঞ্চলের বিবরণ আছে—বিরেহী, লােকপাল-নন্দনকানন ও স্বর্গারােহণী। কিন্তু উমাপ্রসাদের লেখার গুণই এমন যে পাঠক সে সকল অঞ্চল নিজের চোখে দেখলেও, গ্রন্থ-পাঠেই ভ্রমণের সমান আনন্দ পাবেন। আর যাঁদের এসব অঞ্চল দেখা, তারা পাবেন, পুনর্বার ভ্রমণের সুযােগ ও আনন্দ।
Umaprosad Mukhopaddhay-এর জন্ম ১৯০২ সালের ১২ই অক্টোবর। সেই দিনটি ছিল বিজয়া দশমী। সেই কারণেই নাম হল বিজু। পোশাকী নাম উমাপ্রসাদ, যেহেতু দেবী দুর্গা ফিরে যাবার দিন আশুতোষজায়া যোগমায়া দেবীর কোলে এই ফুটফুটে সুশ্রী শিশুটি উপহার দিয়ে গেলেন। খেলাধুলো শরীরচর্চা বিদ্যাচর্চার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনুরাগের পরিচয় পাওয়া গেছে। চিত্রাঙ্কন, ফোটোগ্রাফি, সঙ্গীত এই সবেতেই তার ঝোঁক ছিল। শরৎচন্দ্রের সঙ্গে একান্ত অন্তরঙ্গতা ছিল। ‘বঙ্গবাণী' পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলার অনেক সাহিত্যিকদের সঙ্গে এই সূত্রে পরিচয় হয়। আইনজীবীর পেশা গ্রহণ করেন এবং আইন কলেজে অধ্যাপনা করেন। তবে এই সব পরিচয়ের উর্দ্ধে আছে ভ্রামনিকের জীবন। ১৯২৮ সালে মাকে নিয়ে যান কেদার-বদরী দর্শনে। তখন হৃষীকেশ থেকে হাঁটাপথ। যাতায়াতে প্রায় ৪০০ মাইল। ১৯৩৪ সালে গেলেন উমাপ্রসাদ কৈলাস ও মানস সরোবরে। প্রচারবিমুখ উমাপ্রসাদ সাহিত্যজীবন শুরু করেন অনেক পরে। খবরের কাগজ পড়া ছেড়েছিলেন মেজদা শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকেই। তারপর থেকে হিমালয় ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কত যে ভ্রমণ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। প্রধানত প্রখ্যাত আইনজীবী অতুলচন্দ্র গুপ্ত মহাশয়ের পীড়াপীড়িতেই তার প্রথম ভ্রমণকাহিনী গঙ্গাবতরণ প্রকাশিত হয়। তার পর একে একে আরও পনেরোটি গ্রন্থ। মণিমহেশ গ্রন্থের জন্য তিনি পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার। ১৯৮৮ সালে শরৎ পুরস্কারে’ সম্মানিত হন। এছাড়া পেয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণপদক’ ও ‘দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পুরস্কার। উমা প্রসাদের তিরোধান দিবসটিও বড় আশ্চর্যের। ১৯৯৭ সালের ১২ই অক্টোবর, সেদিনও ছিল বিজয়া দশমী।