”মুখোশ” বইটির সম্পর্কে কিছু কথাঃ বেহার প্রদেশের ছােটখাট একটি স্টেশন। শহরটা স্টেশন থেকে পূবে বেশ খানিকটা দূরে এবং ইতস্তত ছড়ান। আর দক্ষিণ দিকে শহর গড়ে ওঠে নি। জঙ্গল আর ছােট ঘােট পাহাড়। জঙ্গল যেখান থেকে শুরু হয়েছে তারই মাইল খানেক আগে একটা পুরাতন কুঠি বাড়িতে বর্তমান কাহিনীর যবনিকা উত্তোলিত হচ্ছে। | কুঠি বাড়িটার আশপাশে অন্তত মাইল খানেকের মধ্যে আর বসতি নেই। শুধু আছে একটা নাতি-প্রশস্ত পথ। তবে জঙ্গল সীমানার বরাবর কিছু দেহাতী গােয়ালা শ্রেণীর ললাকের বাস আছে। কুঠি বাড়িটা শােনা যায় এককালে নাকি কুখ্যাত নীলকুঠি ছিল। ফ্যালকন সাহেবের নীলকুঠি। পরে ঐ সাহেবের মৃত্যুর পর এক ধনী বেহারী ভদ্রলােক ঐ কুঠি বাড়িটা তার আত্মীয়দের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নিয়েছিলেন। ক্ৰয়ই করেছিলেন— বসবাস কেউ করে নি ওখানে। পড়াে বাড়ির মতই কুঠি বাড়িটা বহু বছর ধরে পড়ে ছিল। তার পর বছর আষ্টেক আগে হঠাৎ যুদ্ধ থেমে যাবার পর যুদ্ধ-ফেরতা মেজর রাজেশ্বর চৌধুরী কুঠি বাড়িটা ক্রয় করেন এবং সমস্ত বাড়িটা সংস্কার করে সেখানে এসে বাস করতে শুরু করেন। প্রায় দেড় বিঘা জায়গা নিয়ে কুঠি বাড়িটা। আর এই কুঠি বাড়িটিকে কেন্দ্র করেই মুখোশের প্রেক্ষাপট রচিত। গল্পের বাকি অংশ জানতে বইটি পড়ুন.....
বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটি রায় এর স্রষ্টা এবং জনপ্রিয় রহস্য কাহিনী লেখক ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না, একইসাথে ছিলেন একজন চিকিৎসকও। একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক হিসেবে দুই বাংলাতেই লাভ করেছেন বিশেষ পাঠকপ্রিয়তা। ওপার বাংলায় বেড়ে ওঠা ও জীবন কাটালেও তিনি জন্মেছিলেন এপার বাংলায়। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় ১৯১১ সালের ৬ জুন বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয় পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রখ্যাত কাহিনীকার। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করতে হয়েছে । শেষ পর্যন্ত কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করার পর তিনি কলকাতার কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন ও চর্মরোগ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন লন্ডন থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডাক্তার হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন দেশের রণাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে সেবাদানের পাশাপাশি বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, যার ছাপ পরবর্তীতে পড়েছে নীহাররঞ্জন গুপ্ত এর বই সমূহতে। নীহাররঞ্জন গুপ্তের বই লেখার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই এবং সেই সূত্রে তিনি অনেক কম বয়সেই তাঁর প্রথম উপন্যাস 'রাজকুমার' রচনা করেন। তবে নীহাররঞ্জন গুপ্তের উপন্যাস এর মধ্যে তাঁকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে তাঁর লেখা গোয়েন্দা উপন্যাস সমূহ, যা রচনা করার আগ্রহ থেকে তিনি ব্রিটেনে অবস্থানকালে সাক্ষাৎ করেন আরেক বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনী রচয়িতা আগাথা ক্রিস্টির সাথে। নীহাররঞ্জন গুপ্তের গোয়েন্দা গল্প এর মধ্যে প্রথমটি হলো 'কালোভ্রমর', যেখানে তিনি সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সেরা সৃষ্টি গোয়েন্দা কিরীটি রায়ের সঙ্গে। এছাড়াও নীহাররঞ্জন গুপ্তের রচনাবলী এর মধ্যে 'মৃত্যুবাণ', 'কালনাগ', 'উল্কা', 'হাসপাতাল', অপারেশন', 'কিরীটি অমনিবাস' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নীহাররঞ্জন গুপ্তের বই এর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। আর নীহাররঞ্জন গুপ্ত এর বই সমগ্র এর মধ্যে প্রায় ৪৫টি নিয়ে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। এছাড়াও তিনি 'সবুজ সাহিত্য' নামে শিশু-কিশোর উপযোগী সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বিখ্যাত সাহিত্যিক ৭৪ বছর বয়সে ১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।