যুগের পর যুগ অতিবাহিত হয়ে গেল। অবশেষে তাঁর তপস্যার একাগ্রতা ও গভীরতা দেখে দেবতারা মুগ্ধ হলেন। তাঁরা দল বেঁধে ছুটে এলেন নারায়ণের কাছে সব শুনে খুশি হলেন নারায়ণ। তিনি দেবতাদের নিয়ে গয়াসুরের তপোভূমিতে উপস্থিত হলেন। তাঁদের উপস্থিতি কিন্তু গয়াসুরের তপস্যায় কোনো বিঘ্ন ঘটাতে পারল না। বাধ্য হয়ে নারায়ণকে তাঁর তপস্যাভঙ্গ করতে হল। চোখ মেলে ভগবানকে দর্শন করে গয়াসুর বড়ই বাধিত হলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে নারায়ণ ও দেবতাদের প্রণাম করে করজোড়ে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলেন। স্নিগ্ধস্বরে নারায়ণ বললেন—অসুররাজ! তোমার তপস্যায় আমি প্রসন্ন হয়েছি। বলো, কি তোমার প্রার্থনা ? —ভগবান! আপনি আমাকে এমন বর দান করুন যাতে আমাকে স্পর্শ করলেই মানুষ যেন সোজাসুজি স্বর্গলোকে গমন করতে পারেন। ভক্ত গয়াসুরের লোকহিতকর বাসনা শুনে নারায়ণ আবার মুগ্ধ হলেন, তিনি সানন্দে বললেন—তথাস্ত ! তারপর থেকে পাপীরাও গয়াসুরকে স্পর্শ করে স্বর্গে যেতে শুরু করে দিল । নরক ক্রমেই জনবিরল হতে থাকল। চিত্রগুপ্ত বেকার হয়ে গেলেন। যমরাজ প্রমাদ গণলেন। সৃষ্টি যে রসাতলে যায় ! বাধ্য হয়ে ইন্দ্র ও ব্রহ্মাকে নিয়ে যমরাজ ছুটে গেলেন নারায়ণের কাছে। সব শুনে বিষ্ণু ব্রহ্মাকে বললেন—আপনি যজ্ঞের জন্য গয়াসুরের কাছ থেকে তার দেহটি চেয়ে নিন । প্রজাপতি এলেন গয়াসুরের কাছে। দৈত্যরাজ তাঁকে প্রণাম জানিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন। বললেন – হে পরমপিতা। অনুগ্রহ করে বলুন, আমি কিভাবে আপনার সেবা করতে পারি?
Shonku Moharaj বর্তমান বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যের জনপ্রিয়তম নাম। সুগত সাতাশ বছরে তাঁর ছত্রিশটি শিল্পকর্মের মধ্যে তিনখানি বাদে বাকি সবকটিই ভ্রমণকাহিনী। তাঁর পনেরোটি হিমালয়-কাহিনীর শেষখানি ব্রহ্মলোকে। বিগত গ্রন্থে শঙ্কু মহারাজ-এর সারথ্যে পাঠক-পাঠিকার মানস-ভ্রমণ সম্পণ ‘হয়েছে সূদূরবতী’ সুইজারল্যান্ডে, জয়ন্তী জুরিখে। য়ুরোপের আলপস থেকে স্বল্প স্বাদবদল করে লেখক আবার ফিরে এলেন হিমালয়ে, দেশমাতার পূজায় পুনরায় নিজেকে নিবেদন করতে। বিচ্ছেদবাদ যখন ভারতের অঙ্গচ্ছেদনে শামিল, জাতীয় চেতনার সামনে তখুনি তিনি তুলে ধরলেন গুর্জর কিশোরী শ্যামা আর কিশতোয়ারী মালবাহক আবদুল রসিদের কথা, যারা বিদায়বেলায় বাঙালি অভিযাত্রীদের জন্য চোখের জল ফেলে, হিন্দু সাহেবদের নিরাপত্তার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কারফিউ কবলিত শহরে ছুটে আসে। বাঙালির কাছে প্রায় অপরিচিত কিশতোয়ার-হিমালয়ের ওপরে রচিত বাংলাসাহিত্যের প্রথম ভ্রমণকাহিনী এই ব্রহ্মলোকে। কলকাতার একদল দামাল যুবক গিয়েছিলেন কিশতোয়ার হিমালয়ের দুগেমতম শৃঙ্গ ব্রহ্মা-১ (২১,০৪৯) পর্বতাভিযানে। লেখক সেই অভিযাত্রীদের অন্যতম। তবে তিনি কেবল পর্বতারোহণ নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি। সেই সঙ্গে তাঁর সাবলীল ভাষায় বলেছেন, অনাবিষ্কৃত বিশতোয়ার হিমালয়ের ভাষা ভূগোল ইতিহাস গাছপালা পশু-পাখি পাহাড় ও পথের কথা, বলেছেন সরল ও সুন্দর মানুষদের কথা, যাঁদের সহজ জীবন আর লেখকের সরস লিখন একযোগে পাঠক-পাঠিকাকে নিয়ে যাবে ব্রহ্মলোকের ব্রজ্যায়।