“আত্মপ্রকাশ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ স্বপ্নের জগতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কোন বইমেলায় কবিতা উৎসব আড্ডায় হাসতে দেখা যাবে না-প্রিয় দাদাকে। দাদা। নাই অথচ রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টি তাঁর সাহিত্য কর্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের খুব খুব কাছে থেকেও অনেকেই বুঝতে পারেননি সুনীল সাগরের কূল কিনারা। তাঁকে জানার জন্য প্রয়ােজন তাঁর সৃষ্টিকে জানা। ভালবাসা। বাংলা সাহিত্যে আর একজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম হবে কি-না জানি না। হয়তাে হবে। হয়তাে না। তবে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান দেশ ভাগের পর কলকাতায় গিয়ে যেভাবে পাল্টিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর জীবন। ঠিক তেমনিভাবে যেকোন মানুষের জীবন পাল্টাতে পারে। সুনীল সাহিত্যকর্ম। তাঁর লেখা ‘আত্মপ্রকাশ’ এমনই সৃষ্টি। আত্মপ্রকাশ’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। এক জীবনে মানুষ কত কি যে করতে পারে ইচ্ছে অনিচ্ছে করতে পারে। বন্ধুর জন্য বন্ধু কতটুকু করতে পারে তার জীবন্ত সাক্ষী আত্মপ্রকাশ। বন্ধুর তুলনা শুধু বন্ধু। আবিষ্কার তার পাঠকের কাছে বাংলা ও অন্যান্য ভাষার সেরা লেখকদের প্রথম উপন্যাস পৌছে দেয়ার অঙ্গীকার করে। একাজে সর্বাগ্রে সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সমরেশ মজুমদার আবিষ্কারের পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।