Flap Page– 1 এলমা। জাতিসংঘে কর্মরত ফরাসী সেনাবাহিনীর উচ্ছল এক তরুণী। পশ্চিম আফ্রিকার বনভূমির অকৃত্রিম মাদকতা তার উদ্ভিন্ন শরীর আর মনে। দিবা? ঢাকা বিমান বন্দরে অথৈর একঝলক দেখা ছটফটে এক কৈশোর উত্তীর্ণ নারী। চঞ্চল হয়েও যার ভেতরের মনন মন্দ্রিত এক সাগরের মতো। অথৈ জাতিসংঘে কর্মরত তরুণ সেনা-অফিসার। এই পৃথিবী? প্রজন্মান্তরে, যুগ-যুগান্তে একদিকে প্রকৃতি এবং মানুষের অপার ভালোবাসায় মুগ্ধ, অন্যদিকে মানুষেরই তৈরি করা যন্ত্রণার বেড়াজালে বিক্ষত। বিক্ষত এই পৃথিবীর ছোট ছোট ক্ষত হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে সারতে গিয়েই অথৈ জড়িয়ে পড়ে এলমার সঙ্গে। তার ভালোবাসার নারী দিবার প্রেরণাকে বুকে ধারণ করে অথৈ কি পারবে এলমার মোহনীয়তা অতিক্রম করতে? পারবে কি সভ্য-জগৎ থেকে হাজার কিলোমিটার গভীর অরণ্যের ভেতর থেকে ফল ব্যাককে উদ্ধারের প্রহসন নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটাতে? নরখাদকদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত পৃথিবীর আধুনিকতম সেনাবাহিনীর দুই নেতৃত্ব এক সময় ট্রুপস বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাসান্দ্রা অতিক্রম করে বর্শাবিদ্ধ এলমাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে কি অথৈ? অথৈর জন্য হৃদয়ের একসাগর ভালোবাসা ধারণ করা দিবা কতদিন পাণ্ডুর আর বিষন্ন সন্ধ্যা অতিক্রম করবে? দিবা যখন নিজ গর্ভের সন্তানের অস্তিত্ব টের পায় তখন বিবিসি খবর প্রচার করছে ‘নরখাদকদের খপ্পরে অথৈ-এলমা। তাদের বেঁচে থাকা অনিশ্চত। ’ আর অন্যদিকে সাসান্দ্রা অতিক্রম করে হাজার কিঃ মিঃ দূরে পেট্রিগোয়ার নির্জন আর নিবিড় বনে বর্শাবিদ্ধ এলমাকে নিয়ে প্রাণ হাতড়ে ফেরা অথৈ হঠাৎ খুঁজে পায় এক আতুর এলাকা। কাকতালীয়ভাবে যেখানে গর্ভের ভ্রুণ বিক্রি করতে আসা দক্ষিণ ভারতীয় রাখী-বোন অনিতাকে খুঁজে পায় অথৈ। আতুরঘরে অথৈ-এলমাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য স্থানীয় উপজাতীয় রাজা যার মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করেছেন। কাকে উদ্ধার করবে অথৈ? ফল ব্যাক? আনিতা? এলমা? তারপর? অবিরত বৃষ্টিভেজা বন। অনন্ত আফ্রিকার অনিন্দ্য বনভূমি। কর্ণেল ফল ব্যাকের রহস্যময় রাজ্যে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেওয়া অথৈ-এলমার বাদামি কাঠের ঘর! প্রতিনিয়ত রহস্যভরা রোমাঞ্চকর এই জীবন অতিক্রম করে অথৈ কি পারবে দিবার কাছে ফিরে আসতে?
Flap Page - 2 কবিতামগ্নতা একজন কথাশিল্পীর শব্দ আর ভাষাকে মর্মস্পর্শী গভীরতা দেয়- এ বোধেই বিশ্বাসী কাজী রাফি। পশ্চিম আফ্রিকার প্রকৃতিকে যে গভীরতায় তিনি উপলদ্ধি করেছেন তার কাব্যিক ব্যঞ্জনা রয়েছে ধূসর-স্বপ্নের সাসান্দ্রা’য়। উপন্যাসের পরতে পরতে ঠাসা এবং জটিল গল্পের বুনন থাকলেও পাঠক গল্পের ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে পাবেন প্রাণস্পর্শী কবিতার আমেজ। প্রকৃতির মতো সহজ ভাষাকে গ্রহণ করেও লেখক আরাধ্য প্রকৃতি এবং মানুষ প্রজাতির ভেতরে যুগ যুগ প্রবহমান অনুভবের ফিসফিস কথোপকথন করিয়েছেন সমগ্র উপন্যাস জুড়ে। পাঠককে গল্পের মোহাচ্ছন্নতায় মুড়িয়ে নিয়ে, আফ্রিকার রহস্যঘেরা বিচিত্র প্রকৃতির ভেতরে ডুবিয়ে দিয়ে তিনিই আবার ভাষাকে পাঠকের অনুভবে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ভিন্ন ধাঁচের এ গল্পের উত্তেজনা, গল্পের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা মানব প্রজাতির যন্ত্রণার ক্ষত আর ভেতরে ভেতরে অনুভূত গভীর জীবনবোধ দিয়ে সৃষ্ট এই উপন্যাস একবার পড়েই পাঠক তৃপ্ত হন না। ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ নামক এই উপন্যাসটির নস্টালজিক এক জগত আর অনুভবের কাছে তাদের বার বার ফিরে আসতে হয়। তাদের পঠিত অনেক প্রিয় উপন্যাসের মাঝে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ দিন দিন পাঠকের মনোভূমিতে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে। কাজী রাফির লেখার বিষয়বস্তু উপন্যাস এবং ছোটগল্প। ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা-র উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০’ এবং ‘এম এস ক্রিয়েশন সম্মাননা-১০’। উপন্যাস ও ছোট গল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩’।
Title
ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা (কালি ও কলম পুরস্কারপ্রাপ্ত ২০১০)
কথাসাহিত্যিক কাজী রাফি ১৯৭৫ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইচ উদ্দীন এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশনসহ কমিশনপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে তিনি নিজ ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস তার লেখা প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ , ‘ত্রিমোহিনী’ , রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ , ‘পাসওয়ার্ড’ , ‘রংধনুর সাঁকো’, ‘লে জোঁ নদীর বাঁকে’, নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস’, অরোরার আঙুল’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০’ এবং ‘এম এস ক্রিয়েশন (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) সম্মাননা’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ ।