"সংস্কৃতি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মানুষের ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং সর্বোপরি মানসিক জীবনের একটি আবশ্যিক ও জরুরী বিষয় হলাে সংস্কৃতি। একে এড়িয়ে যাওয়া আর সঙ্কট সমস্যাকে জিইয়ে রাখা প্রায় একার্থক। কেননা, গভীরতার ও ব্যাপকতর তাৎপর্যে সংস্কৃতি হচ্ছে মনুষ্যত্বেরই নির্যাস, অথবা নামান্তর কিংবা মনুষ্যত্বের বা মানবতার প্রতীক, প্রতিম, প্রতিভূ বা প্রতিরূপ। সংস্কৃতি কথাটা উচ্চারণ করা সহজ, তাই সবাই সর্বক্ষণ বুঝে নাবুঝে, জেনে না-জেনে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি নানা প্রসঙ্গে উচ্চারণ করে থাকে। কিন্তু Calture কৃষ্টি বা সংস্কৃতির তাৎপর্য বােঝা কঠিন, বােঝনো কঠিনতর। এই কঠিন জিনিসটিই বােঝানাের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাজ্ঞজন ড. আহমদ শরীফ। এখানে গ্রন্থভুক্ত হয়েছে তিনটি বড়াে প্রবন্ধ এবং তিনটিই সংস্কৃতির উপর বিশ্লেষণধর্মী রচনা। সংস্কৃতির উৎসসন্ধান করেছেন, সেই সাথে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন সংস্কৃতিও স্থানিক, গৌত্রিক, জাতিক, ধার্মিক, সাম্প্রদায়িক রূপ হারিয়ে রূপান্তরে বৈশ্বিক হয়ে উঠবে এমন কথাও হয়তাে স্বপ্ন-সংশয় নিয়ে উচ্চারণ করা হবে অদূর ভবিষ্যতে। সাংস্কৃতিক তথা আচারিক স্বাতন্ত্র্যচেতনা, রক্ষণশীলতা ও অপসংস্কৃতি এবং বিকাশের পথে অভিন্ন বৈশ্বিক সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলােচনা করেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার অনন্য ব্যক্তিত্ব এবং মধ্যযুগের সাহিত্য ও ইতিহাসের বিদগ্ধ পণ্ডিত ড. আহমদ শরীফ পঞ্চাশ দশক থেকে নিয়মিতভাবে প্ৰবন্ধ লেখা শুরু করেছিলেন এবং তা তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলমান ছিল। ড. আহমদ শরীফ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে উপেক্ষা করা যায় তবে কোনো অবস্থাতেই তাঁর বিশাল কীর্তি অস্বীকার করা যায় না । নিজস্ব দর্শন চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে বোদ্ধা সমাজের কাছে তিনি ছিলেন বহুল আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও এ ধারা বহমান। ভাববাদ মানবতাবাদ ও মার্কসবাদের যৌগিক ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণে, বক্তব্য ও লেখনীতে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে পাহাড়সম গবেষণাকর্ম, সহস্রাধিক প্ৰবন্ধ তাকে কিংবদন্তী পণ্ডিত হিশেবে উভয় বঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১; গ্রাম সুচক্রদণ্ডী, উপজেলা পটিয়া, জেলা চট্টগ্রাম। পিতা আব্দুল আজিজ, মাতা সিরাজ খাতুন। প্রথম স্কুল চট্টগ্রাম শহরের আলকরণ মিউনিসিপ্যাল প্ৰাথমিক বিদ্যালয়। প্রবেশিকা পাশ করেন পটিয়া হাই স্কুল থেকে, আর আইএ, এবং বিএ পাশ করেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে, এবং এমএ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১৯৬৭ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ, বিষয়: সৈয়দ সুলতান, তার যুগ ও গ্রন্থাবলী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক । মৃত্যু ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ ৷৷