"দ্য স্পিরিট অব ইসলাম"বইটির অবতরণিকা: ওগাে তােমার ঠাই নাহি যে কোনখানে। সবিস্ময়ে দেখি তুমি বিশ্বজুড়ে সবখানে। —বােছালি। তােমার খোঁজে ‘কুফর’ ও ‘দীন’ দোঁহে মিলে পথ যে চলে তুমি এক, নাই যে শরিক',—সেই কথাটি চেঁচিয়ে বলে। — সানায়ি মানবজাতির মধ্যে ধর্মীয় অগ্রগতির নিরবচ্ছিন্নতা মানবিক বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এক মনােমুগ্ধকর কৌতূহলের বস্তু। বিশ্বপ্লবী যে পরমপুরুষের, যে সুমহান ইচ্ছাশক্তির উপলব্ধিতে মানবমনের ক্রমাগত জাগরণ সাধিত হয়েছে ; সমগ্র অস্তিত্ব পরিব্যাপ্ত, নিয়ন্ত্রিত ও বিকশিত করে যে পরমাত্মা বিরাজিত আছেন তাঁর ধারণায় উপনীত হওয়ার পূর্বে ব্যক্তি ও জাতি যে দুর্গম ক্লেশকর পথের চড়াই-উতরাই পার হয়েছে—সেসবের মধ্যে সুগভীর তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় মনুষ্যজাতি জড়বস্তুর উপাসনা থেকে আল্লাহর উপাসনায় উন্নীত হয়েছে তার গতিবেগ বারংবার মন্দীভূত হয়েছে; ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত, উভয় দিক দিয়েই মানুষ অগ্রগতির প্রবাহ থেকে ছিটকে পড়েছে, নিজেদের কামনার নির্দেশে চলেছে, হৃদয়ের মিনতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে; এভাবে তারা তাদের শৈশবের কল্পনার প্রতিমূর্তিতে বিধৃত প্রবৃত্তির পূজায় ফিরে গেছে। অশ্রুত থাকলেও আল্লাহর বাণী সত্যের আহ্বানে নিরন্তর ঝঙ্কৃত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তাঁর মনােনীত বান্দা এসেছেন, নিজের প্রতি ও তাঁর সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহর ঘােষণা শুনিয়েছেন। এসব মানুষই প্রকৃতপক্ষে পয়গম্বর বা সত্যের বাণীবাহক। তারা তাদের জাতির ভেতর থেকেই তাদের কালের সন্ততিরূপে উদ্ভূত হয়েছেন তাঁরা সত্য, অকৃত্রিমতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানবাত্মার প্রদীপ্ত আকাক্ষার প্রতীক। প্রত্যেক প্রেরিতপুরুষই তার কালের আধ্যাত্মিক প্রয়ােজনের মূর্ত-প্রকাশ ; প্রত্যেকেই অধঃপতিত মানবগােষ্ঠী, পঙ্কিল জনসাধারণকে শুচিশুদ্ধ, সংস্কৃত ও উন্নত করতে এসেছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ এসেছিলেন ক্ষুদ্রতর সংস্কৃতির শিক্ষক হিসেবে ক্ষুদ্রতর পরিমণ্ডলকে প্রভাবিত করতে ; আবার কেউ কেউ এসেছিলেন সমগ্র বিশ্বের জন্য সুসংবাদ নিয়ে—এমন পয়গাম নিয়ে যা এক বংশ কিংবা এক-জাতির মধ্যে সীমিত নয় সমগ্র বিশ্বমানবের উদ্দেশে পরিকল্পিত । এমন একজন প্রেরিতপুরুষ ছিলেন বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদ (সাঃ)।*একমাত্র
জাস্টিস স্যার সৈয়দ আমীর আলীর জন্ম ১৮৪৯ সালের ৬ এপ্রিল, হুগলি জেলার চুড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা সৈয়দ সাদত আলীর পূর্বপুরুষরা ইরান থেকে এদেশে এসেছিলেন। তাঁর বংশের অনেকেই ছিলেন পারস্য, দিল্লি ও অযােধ্যা রাজদরবারের বিশিষ্ট প্রতিনিধি।। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এম. এ. ও আইন পাস করেই আমীর আলী কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ লাভ। করেন। কিছুকাল পরই চাকরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে আইন ব্যবসা শুরু। এরপর ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৮৭৩ সালে বিলেতের ইনার টেম্পল থেকে। কতিতের সাথে ব্যারিস্টারি পাস। ওই বছরই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এবং হাইকোর্টে আইন-ব্যবসার সূত্রপাত। ১৮৭৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলাে নির্বাচিত হয়। পরের বছর হন প্রেসিডেন্সি কলেজের আইনের অধ্যাপক। ১৮৮১ সালে তোকে টেগাের ল’ প্রফেসর নিযুক্ত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার তাকে প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যও মনােনীত করেন। তিনি যােগ্যতার সাথেই সে দায়িত্ব পালন করেন ১৮৮৩ সাল পর্যন্ত। ১৮৯০ সালে তিনি নির্বাচিত হন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। পরে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ অলংকত করেন। সুদীর্ঘ চৌদ্দ বছর সে দায়িত্ব পালনের পর ১৯০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। স্যর সৈয়দ আমীর আলী বিয়ে করেছিলেন এক সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারে। তাই তার অবসর জীবন বিলেতেই কাটে। ১৯০৯ সালে তাঁকে বিলেতের প্রিভি কাউন্সিলের বিচারপতি নিযুক্ত করা হয়। তার আগে কোন ভারতীয় এই কিংস কাউন্সিলে প্রবেশ করতে পারেননি। জাস্টিস আমীর আলীর চেয়ে লেখক আমীর আলীর স্থান অনেক উচ্চে। তিনি ইসলাম সম্পর্কে ও আইন-বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তার মধ্যে কয়েকটির নাম দেওয়া হল : ১। দ্য স্পিরিট অব ইসলাম। ২। হিষ্ট্রী। অব স্যারাসেন। ৩। এথিকস অব ইসলাম। ৪। মহামেডান ল ইত্যাদি। | সৈয়দ আমীর আলীর গুণবত্তায় মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে সি, আই ই. খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেন। ১৯২৮ সালে এই প্রতিভাবান পুরুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিলেতের বাড়িতে।