প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক আঁলা বাদিয়ু নিকোলাস ত্রুয়নের সাথে প্রেমের প্রকৃতি, প্রেমের সমস্যা, প্রেমের জন্য সংগ্রাম, এবং তার লক্ষ্য ও পরিণতি নিয়ে আলাপচারিতায় নিরত হন এই রচনাটিতে। ফ্রান্সের আভিনো মেলায় তাঁদের আলাপচারিতার একটি সম্প্রসারিত লিখিত রূপ এই পুস্তকটি। বাদিয়ু দেখতে পান যে, আধুনিক যুগে প্রেম বহুবিধ সংকটের মুখে নিপতিত হয়েছে। তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিকোণ ও অঙ্গীকার থেকে তাঁর কাছে অনুভূত হয় যে, প্রেমকে সেইসব সংকট থেকে উদ্ধার করতে হবে, তাকে ‘পুনরাবিষ্কার’, ‘পুনর্নির্মাণ’ করতে হবে। কী সেই সংকট? তাদের মধ্যে প্রথমেই আছে নিরাপত্তা দ্বারা সৃষ্ট সংকট; দৈব আর অনিশ্চয়তা যে প্রেমের সহজাত প্রকৃতি, তা হারিয়ে ফেলেছে প্রেম—তাকে এক ‘শূন্য-ঝুঁকির’ ক্রিয়া করে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভোগবাদ প্রেমকে অর্থহীন করে তুলেছে, সঙ্গী-সঙ্গিনীর প্রতি অঙ্গীকারহীন, ‘অপর সত্তার’ প্রতি সংবেদনহীন করে তুলেছে। আর প্রেমবিরোধী শিবিরের প্রচারণা, বাঘা বাঘা দার্শনিক এবং অন্যান্যদের প্রেমবিরোধী যুক্তি তো রয়েছেই। এই প্রেক্ষাপটে বাদিয়ু প্রেমের পক্ষে, অনেকটা প্লেটোর অনুসরণে, এক নতুন দৃষ্টিকোণ ও অঙ্গীকার নির্মাণ করেন। তিনি বলেন, “আমার দার্শনিক ‘জার্গন’-এ যাকে আমি একটি ‘সত্য প্রক্রিয়া’ বলি, তা-ই বাস্তবিকপক্ষে প্রেম, অর্থাৎ, তা এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সুনির্দিষ্ট ধরনের সত্য নির্মিত হয়। এই সত্য সাদামাটা কথায় দুজন সম্পর্কে সত্য: সেসত্য, বলতে গেলে ভিন্নতা থেকে উৎসারিত। এবং আমি মনে করি প্রেম—যাকে আমি ‘দুই দৃশ্যপট’ বলি—হল এই অভিজ্ঞতা। এ-অর্থে, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী সমস্ত প্রেম টিকে থাকার অঙ্গীকার করে, এবং ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিত থেকে এই অভিজ্ঞতাকে আপন করে নেয় এবং ভিন্নতা নিয়ে কোনো এক দিক দিয়ে নতুন সত্য সৃষ্টি করে।”
Title
প্রেমবন্দনা-নিকোলাস ত্রুয়নের সঙ্গে আঁলা বাদিয়ুর কথোপকথন
১৯৫৩ সালের ১ লা অক্টোবর নরসিংদি জেলার বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে নীতি বিশ্লেষণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন (সর্বশেষ দায়িত্ব পালন-বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ম্যানিলা)। তাঁর আগ্রহের বিষয় বিজ্ঞানের দর্শন ও তুলনামূলক মিথলজি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত পুস্তুক : প্লেটোর রিপাবলিক-এর ভূমিকা; রবীন্দ্রনাথ : কার্ল পপারের নির্বাচিত দার্শনিক রচনা; প্লেটোর আইনকানুন; রিপাবলিক, সিম্পেজিয়াম, রাষ্ট্রনায়কসহ প্লেটোর ১৭টি সংলাপের অনুবাদ এবং দর্শনের আরো কিছু ধ্রুপদী গ্রন্থ।