‘পাখা থাকলেই পাখি হয় না’―চিল মাছিকে এ কথা বলে উড়ে গেল। এ কথার মধ্যে অনেক শিক্ষার বিষয় আছে। এমনই একটি শিক্ষণীয় গল্পের বই ‘রাজার সাথে বাজি’। বইটি লিখেছেন―মোজাম্মেল হক নিয়োগী। সরাসরি যা বলে শেখানো যায় না তা প্রতীকী বা গল্পের ছলে শেখানো যায়। শিশুদের উপযোগী এ বইটিতে একটি মাছি আর একটি চিল পাখির গল্প রয়েছে। মাছি আকাশে উড়তে পারে ভেবে তার গর্বের শেষ নেই। কিন্তু তার ওড়ার শক্তি কতটুকু তা হয়তো সে জানত না। একদিন এক চিল পাখির সাথে সে বাজি ধরে বসল―সে তার সাথে ওড়ার প্রতিযোগিতা করবে! চিল পাখি তাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না। তবুও সে নাছোড় বান্দা। সে চিল পাখির সাথে ওড়ার প্রতিযোগিতা করবেই করবে। অবশেষে বিরক্ত হয়ে চিল পাখি মাছির প্রস্তাবে রাজি হলো। যখন ওড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হলো তখন চিল পাখি ধীরে ধীরে উড়তে উড়তে আকাশের অনেক ওপরে উঠে গেল। কিন্তু মাছি তো তার ছোট পাখনা দিয়ে বেশি ওপরে উড়তে পারে না। তবু সে জোর করে ওপরে উড়তে গিয়ে বাতাসের ধাক্কায় মাটিতে ছিটকে পড়ে। অত ওপর থেকে পড়ে যাওয়াতে তার পাখনা ভেঙে যায়। বেচারা চিল পাখির সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এমন ধরাশায়ী হয়ে যাবে আগে বুঝতে পারেনি! খুব সুন্দর রঙিন ছবির সাথে এই গল্পটি সাজানো হয়েছে। যার যতটুকু শক্তি সে সম্পর্কে না জেনে অন্যের সাথে লড়তে নেই। চিল আর মাছির সংলাপধর্মী এই গল্পটিতে বর্ণনা কম। ফলে পড়তে পড়তে মনে হবে যেন চিল আর মাছি মধ্যের কথপোকথন কাছাকাছি বসে শুনছি। আসলে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীই কথা বলতে পারে না। তারা নানা রকম স্বর তুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। এ গল্প পড়ে―চাইলে আমরাও এমন সব প্রাণীকে নিয়ে গল্প রচনা করতে পারি। স্কুল ছুটির দিনগুলোতে কিংবা অবসর সময়ে গল্প পাঠ করে সময় কাটানোর মজাই আলাদা। আর হ্যাঁ, গল্প পড়ে শুধু নিজেই মজা পেলে চলবে না, বন্ধুদেরও এই গল্প পড়ে পড়ে কিংবা বই উপহার দিয়ে শোনাতে হবে। তাহলে সবাই মিলে মজা পাওয়া যাবে।
মােজাম্মেল হক নিয়ােগী। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সুরাশ্রম গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা ফজলুল হক নিয়ােগী বিমান বাহিনীর সৈনিক ছিলেন। মা সুফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তৃতীয়। শতাধিক বইয়ের রচয়িতা কঠোর পরিশ্রমী লেখক। স্বভাবে কোণঘেঁষা। নিভৃতচারী। বহুমাত্রিক লেখক। লেখার বিষয়ও বহুমাত্রিক: জীবনবােধ, লােকজ সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষাআন্দোলন, বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। প্রান্তিকী, জলের লিখন, ফাঁদ, কালবাতাস, কুহেলীকুহক, ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসর কাবিন, ছায়াপথ, অরণি, অ্যাকোরিয়ামের মীনকন্যা, শেষ কথাটি যাও বলে ইত্যাদি উপন্যাস সমাজবাস্তবতার জীবন্ত দলিল। সত্তরের অধিক শিশুসাহিত্যের বই। বত্রিশের সবুজ পাতা, শরণার্থী শিবির থেকে, আগুনঝরা দিনগুলাে, রাজুদের বাড়ি আসার পর, ছােট মামা উল্লেখযােগ্য কিশাের-কিশােরী উপন্যাস। চৌদ্দটি গানের সুরমঞ্জরিত হয়েছে। কৃষ্ণপক্ষের জোছনা ও ‘গন্তব্য' নামে দুটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক একাডেমিক বই আটটি এবং এগুলাের মধ্যে দুটি বই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই। ইংরেজি ভাষাতে লেখা ও অনূদিত বই রয়েছে কয়েকটি। তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (সমাজকল্যাণ, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও শিক্ষা)। চাকরি করেছেন সিসিডিবি, আইসিডিডিআর,বি, কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনেস্কোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে ব্রিটিশ কাউন্সিলে কর্মরত।