২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সারা বাঙলার মানুষের এক অনন্য উদ্বোধন আজকের গণজাগরণ মঞ্চ। দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে চলমানএই আন্দোলন স্বাধীনতার চেতনার বাঙলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক প্রবাদপ্রতিম লড়াই। গণজাগরণ মঞ্চের এই আন্দোলনের মূল প্রেক্ষণ ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মহান জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে দেয়া ছয়দফা- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাঙলাদেশ প্রতিষ্ঠার অনন্য ভিত্তি। এই লড়েইয়ের পথ আরও দীর্ঘ, তাই আন্দোলনটি এখনও চলমান। নাতিদীর্ঘ এই সময়ে এই আন্দোলনকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু বাধা-বিপত্তি। নানা বক্তব্য-বিবৃতি ও স্মারকলিপি তৈরি করতে হয়েছে এই আন্দোলনের চলমান সময়ে। এখনও নানা ধরণের দলিলপত্র তৈরি হচ্ছে, প্রতিদিনের আন্দোলনকে চালিয়ে নেবার জন্য। এই গ্রন্থে ২০১৩ সালের বক্তব্য- গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতি ও স্মারকলিপিগুলো রাখা হয়েছে। প্রতিটি লেখার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রাসঙ্গিক নোট ও পরিশিষ্ট। মারুফ রসূল এই আন্দোলণের একজন কর্মী হিশেবে সম্পাদনা করেছেন গ্রন্থটি। তাঁর সম্পাদনায় এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিশেবে বিবেচিত হবে।
মারুফ রসূল বাঙলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনীতি সচেতন লেখক; তিনি ঔপন্যাসিক, গল্পকার, রাজনীতি বিশ্লেষক এবং সমালোচক। তাঁর রচনা অন্তর্ভেদী, তীব্রভাবে সংবেদনশীল এবং নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত। ইতিহাস, সমকালীন রাজনীতি, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র বিষয়ে গবেষণামূলক ব্লগিং এর জন্যে তিনি যুগপৎ নন্দিত ও নিন্দিত। জন্ম ১৯ ফাল্গুন ১৩৯৩: ০৩ মার্চ ১৯৮৭ ঢাকায়। পড়াশুনা করেছেন গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে তিনি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান দুনিয়া কাঁপানো শাহাবাগ আন্দোলনের তিনি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। এই আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তৈরিতে তিনিই মূল উদ্যোক্তা হিশেবে কাজ করেছেন। এই আন্দোলনের ইতিহাস তাঁর রচনার মধ্য দিয়েই ক্রমান্বয়ে লিখিত হচ্ছে। চলমান শাহাবাগ আন্দোলনের নানা বিষয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রসর ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মারুফ রসূল বিশ্বাস করেন, শিল্প হলো একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। বস্তুত এ কারণেই তাঁর রচনার প্রাণ হয়ে উঠে মানুষ। রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে রচিত তাঁর সাহিত্যকর্মগুলো তাই শেষ পর্যন্ত মানুষের কণ্ঠস্বর- যে মানুষ নির্মাণ করে ইতিহাস, গতিশীল করে সভ্যতাকে- সে-ই মানুষই মারুফ রসূলের শিল্পসত্তার স্থপতি। দর্শনকে তিনি সাহিত্যে রূপ দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চান মানুষের মধ্যে, কারণ তিনি কেবল এবং কেবলমাত্র বিশ্বাস করেন মানুষের পবিত্রতম উদ্বোধন আর যূথবদ্ধ জীবনাচরণে। সাহিত্যে তিনি নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করে চলেছেন- তাঁর শব্দচয়ন তাই তাঁরই জীবনবোধের মতো রক্তাক্ত, তীব্র এবং স্বপ্নময়। ব্লগিং এর ক্ষেত্রেও তিনি অপ্রতিম একটি ধারা সৃষ্টি করেছেন, যা আবেগাক্রান্ত হলেও নিষ্ঠুরভাবে নির্মোহ। শিল্পকে রাজনীতির শক্তিশালী হাতিয়ার জেনেই এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মিছিলের কণ্ঠস্বরকে তিনি যেমন তুলে আনছেন সাহিত্যে, তেমনি প্রতিবাদের দীপ্র মশাল জ্বেলে এগিয়ে যাচ্ছেন আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রেরও দিকে। শিল্পের নানা শাখা কাজ করার ব্রত নিয়ে তিনি প্রতিদিন যেমন নির্মাণ করছেন নিজেকে, তেমনি ভাঙছেনও দিনরাত। বস্তুত এ কারণেই তাঁর চলার পথ এখনও কঠিন, বিপদশঙ্কুল, বাধা-বিপত্তিময় হলেও সত্য। আদর্শের প্রতি এই নিখাদ সততাটুকুই তাঁর একমাত্র সম্বল। এছাড়া মারুফ রসূলের আর কিছুই নেই।