ইংরেজ বণিক ও স্থানীয় বেইমানদের হীন ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতা হারানোর পর এ বাংলা ১৯০ বছর ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। এ সময় সীমাহীন শোষণে নিষ্পেষিত হয়ে বাংলা হারিয়েছিল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য’র চিরায়ত ঐতিহ্য। ব্রিটিশ বিতাড়নের পরও বাঙালিরা ফিরে পায়নি হৃত অধিকার। অধিকন্তু নতুন আঙ্গিকে শাসকরা অবতীর্ণ হয়েছিল পুরোনো শোষকের ভূমিকায়। ফলত, সার্বিক জীবনমান হয়েছিল আরও অধঃপতিত। বাঙালিরা হয়েছিল আশাহত। অতঃপর যে পাকিস্তানের জন্য একদিন জীবনপাত করেছিল, সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই তাঁরা রুখে দাঁড়ায়। ভাষা-সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয় সোচ্চার। স্বাধীনতার জন্য হয় উদগ্রীব। সে স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতিকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন হয়েছে নির্ভীক নেতৃত্ব। সে নেতৃত্বে আসীন ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর চক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সততা, সাহসিকতা ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে তিনি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন পশ্চিমাদের শোষণের নানামাত্রিক রূপ এবং সে নিরিখে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্য করেছেন উজ্জীবিত-অনুপ্রাণিত, পরিশেষে জানিয়েছেন স্বাধীনতার আহ্বান। এভাবেই তাঁর উপর আস্থা অর্পণ করে বাঙালি জাতি দীর্ঘ সংগ্রামের অভিযাত্রা শেষে স্বাধীনতার নিমিত্তে হাতে তুলেছে হাতিয়ার। এ জন্য জাতির জনককে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। জীবনের ৪০ শতাংশ (১১৬৮০ দিন) কাটাতে হয়েছে কারাগারে। তবুও তাঁকে অধিকারহারা গণমানুষের মুক্তির অভীষ্ট থেকে বিচ্যুত করা যায়নি। তাঁর এই সংগ্রামমুখর জীবনের নানারৈখিক অনুষঙ্গকে উপজীব্য করেই লেখা হয়েছে এ গ্রন্থটি। জাতির জনক কতটা একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও সংগ্রামী ব্রত নিয়ে এ জাতিকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ, এ গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে নবপ্রজন্মের সন্তানেরা কিছুটা হলেও সে সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে বলে মনে করি। সে প্রত্যাশাতেই এ প্রয়াস। আশা করি গ্রন্থটি সে প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে।
আমাদের শিশুসাহিত্যের অন্যতম পুরোধা পুরুষ আখতার হুসেনের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১ নভেম্বর। পেশাগত জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। চাকরি করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক পত্রপত্রিকায়। বর্তমানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থার পাণ্ডুলিপি সম্পাদক। ছোটদের জন্য মৌলিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি সম্পাদনা করেছেন বেশ-কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকলন গ্রন্থ। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : দুই বাংলার কবিতায় বঙ্গবন্ধু, দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গল্প, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমের গান, বাংলা সাহিত্যের সেরা উপদেশমূলক কবিতা, বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্পভিত্তিক উপদেশমূলক কবিতা, বাংলা সাহিত্যের সেরা কিশোর কবিতা, বাংলাদেশের বাছাই কিশোর কবিতা (যৌথ), ছোটদের প্রিয় কবিতা (যৌথ), ও হেনরি শ্রেষ্ঠ গল্প, মোপাসাঁ শ্রেষ্ঠ গল্প, ম্যাক্সিম গোর্কি শ্রেষ্ঠ গল্প, মার্ক টোয়েন শ্রেষ্ঠ গল্প, হাবীবুর রহমান রচনাবলি (প্রকাশিতব্য), জীবনী: ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার, কিশোর শহীদ মতিউর রহমান, হাবীবুর রহমান, কাজি আফসারউদ্দিন আহমেদ, যৌথ সম্পাদক: সত্যেন সেন স্মারক গ্রন্থ, বাংলাদেশের ইতিহাসের অ্যালবাম ও আলতাফ আলী হাসু স্মারক গ্রন্থ। এ ছাড়া আখতার হুসেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে ৫ খণ্ডে প্রকাশিত শিশু-বিশ্বকোষ-এর সর্বোচ্চসংখ্যক ভুক্তি লেখক। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর লেখা ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে আজ জাগছে বাঙালিরা/আর রুখবে তাদের কারা’ গানটি বিপুল জনপ্রিয়তাধন্য। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ আখতার হুসেন পেয়েছেন ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার’, ‘ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার স্মৃতিপদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ প্রদত্ত ‘মুক্তিযোদ্ধা কলম সৈনিক সম্মাননা স্মারক’, ‘মনিরউদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক’সহ আরও অনেক সংবর্ধনা স্মারক। আখতার হুসেন বাংলা একাডেমির ফেলো।