বাঙালি জ্যোতিলব্ধ প্রথম চিত্ত-সম্পদ চর্যাপদ; এমন স্নিগ্ধ পুরাশৈলীর পদ-সাহিত্য বিশ্বের গ্রন্থাগারের প্রায় শীর্ষস্থানে সংরক্ষণ যোগ্য। চর্যাপদ বৌদ্ধ বজ্রযানি সিদ্ধাচার্যদের সাধন সংগীত, সম্পূর্ণ রূপক ভঙ্গিতে এবং তন্ত্রের মন্ত্র হিসেবে ধর্মশিক্ষার্থীদের জন্য রচিত। উদ্দেশ্য যা-ই থাক, সূর্যরশ্মি পতিত কেন্দ্রবিন্দু যেমন আলো স্পর্শ করে, চারদিকেও তার জ্যোতি ও আভা বাদ যায় না। ঠিক তেমনি তান্ত্রিক উদ্দেশ্য ব্যতিরেকেও চর্যাপদের সম্মোহনীয় পদ্মশ্রীর রূপস্পর্শে আকুলিত হয় না এমন কেউই নেই, সেখানেই চর্যাপদের কৃতিত্ব। কবিতা যে উদ্দেশ্যে লেখা হোক না কেন, যদি তা হয় হৃদয় নিঃসৃত শিল্পানুরাগে জারিত তবে কবিতা কবিতাই। বৌদ্ধ গান চর্যাপদ তাই আমাদের সেই উৎকৃষ্ট সুরভিত কবিতা এবং আস্বাদনের বিষয়। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৯ সালে নেপালের রাজ দরবার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। সেখানে রাজকীয় পরিবেশে সমাদরে তা গৃহীত হয়েছিল হয়তো-বা বাংলার বৌদ্ধ জীবন-মননে তার ঠাঁই ছিল না বলে। তাই মাজা-ঘষার দরুন বঙ্গীয় রূপ-লাবণ্য কিছুটা ছিন্ন বা ফিকে হয়ে গেলেও পণ্ডিত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র আপ্রাণ চেষ্টায় চর্যাপদে বাংলার প্রাচীনত্ব যথেষ্ট পরিমাণে প্রমাণিত এবং বাংলার আদি সাহিত্য ভাষার নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্তমান সমীক্ষায় সেই উদ্দেশ্য সামঞ্জস্য রেখেও চর্যাপদের কবিতায় যে জগৎ এবং জীবনের অনুপম তাত্ত্বিক সৌকর্য সম্ভার লুকিয়ে তার উদ্ধার করার প্রয়াস রয়েছে।
ড. শামসুল আলম সাঈদ (জন্ম ১৯৪০)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. এবং বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা শেষে এখন অবসর এবং লেখালেখিতে; তবে শয্যাগ্রস্ত হয়ে স্থবির হয়েছেন। এ যাবৎ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : চর্যাপদ : তাত্ত্বিক সমীক্ষা, উপন্যাসে জীবনবোধ ও মূল্যবোধ, হাফিজ ও বিস্ময়কর দিওয়ান, ওমর খৈয়াম, রবীন্দ্রনাথের মুসলমান চিন্তা ইত্যাদি।
Shamsul Alam Sayed - (জন্ম ১৯৪০)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. এবং বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা শেষে এখন অবসর এবং লেখালেখিতে; তবে শয্যাগ্রস্ত হয়ে স্থবির হয়েছেন। এ যাবৎ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : চর্যাপদ : তাত্ত্বিক সমীক্ষা, উপন্যাসে জীবনবোধ ও মূল্যবোধ, হাফিজ ও বিস্ময়কর দিওয়ান, ওমর খৈয়াম, রবীন্দ্রনাথের মুসলমান চিন্তা ইত্যাদি।