ফ্ল্যাপে লিখা কথা আনিসুল হকের রচনার প্রধান গুণ রসবোধ। তার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ক্ষমতা সহজ-সরল, ভাষা হৃদয়স্পর্শী কিন্তু প্রসাদগুণময়। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তিনি যখন লেখেন, তখন তা কেবল নিষ্প্রাণ সংবাদভাষ্য হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে একেকটা সপ্রাণ শিল্পসম্মত সাহিত্য-গুণাবলি-সম্পন্ন বিশেষ রচনা। পাঠকের খুব প্রিয় এই কলামগুলো। প্রধানত প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয় অরণ্যে রোদন নামে। সাম্প্রতিক এক গভেষনায় দেখা গেছে, আনিসুল হক বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলামলেখক। তিনি আশার কথা লেখেন, লেখেন বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথাও। তবে সমস্যাবহুল এই দেশে সংকটের কথাও তো লিখতেই হয়। আশা আর হতাশা মিলিয়ে আমাদের জীবন, তেমনি আনিসুল হকের লেখা এই রচনাগুলো।
ভূমিকা গত এক বছরে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত অরণ্যে রোদন নামের কলাম ও আরও কিছু লেখা মিলে এই সংকলন গ্রন্থটি। প্রধানত সমসাময়িক ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই কলামগুলো রচিত হয়েছে। বছর শেষে সেগুলোর সংকলন বের করে থাকেন অনুপম প্রকাশনী। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হলো না। অনুপম প্রকাশনীর মিলন নাথকে ধন্যবাদ। আশা করি, সবগুলো রচনা সঙ্গে পেয়ে এই বিষয়ে আগ্রহী পাঠক উপকৃত হবেন। সবাইকে ধন্যবাদ
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।