ফ্ল্যাপে লিখা কথা একটি পুরুষের মধ্যস্থলে একটি জলপদ্ম ফুটিয়াছে। জলপদ্মটি পানির পৃষ্ঠদেশ হইতে এক ফুট উপরে।এমন সময় দমকা বাতাস আসিল, ফুলটি তিনফুট দূরে সরিয়া জল স্পর্শ করিল। পুকুরের গভীরতা নির্ণয় করো। -লীলাবতী এই ধরনের প্রচুর অংক আমি আমার শৈশবে পাটিগণিতের বইয়ে দেখেছি। অংকের শেষে লীলাবতী নামটি লেখা। ব্যাপারটা কী? লীলাবতী মেয়েটি কে? তার সঙ্গে জটিল এসব অংকের সম্পর্ক কী? যা জানলাম তা হচ্ছে- সপ্তম শতকের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্যের একমাত্র কন্যার নাম ‘লীলাবতী’। মেযেটির কপালে বৈধব্যযোগ -এই অজুহাতে কন্যাসম্প্রদানের আগে আগে বরপক্ষ মেয়েটির বিয়ে ভেঙে দেয়। লীলাবতী যখন গভীর দুঃখে কাঁদছিল তখন ভাস্করাচার্য বললেন, ‘মা গো , তোমার জন্য কিছু করার সামর্থ্য আমার নেই, তবে পৃথিবীর মানুষ যেন বহু যুগ তোমাকে মনে রাখে আমি সেই ব্যবস্থা করছি। ‘তিনি তাঁর বিখ্যাত গণিতের বইটির নাম দেন ‘লীলাবতী’। গল্পটি আমাকে এতই অভিভূত করে যে ,একরাতে লীলাবতীকে স্বপ্নেও দেখি।এই নামটা মাথার ভেতর ঢুকে যায় । অনেক দিন ইচ্ছা ছিল স্বপ্নে দেখা মেয়েটিকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব। নাম দেব ‘লীলাবতী’ । ভালো কথা, আমার লীলাবতী গল্প কিন্তু ভিন্ন। আমর উপন্যাসের লীলাবতীর বাবা নাম ভাস্করাচার্য না ,সিদ্দিকুর রহমান। তিনি সাধারণ একজন মানুষ। অংকবিদ না।
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।