সূর্যালোকিত মৌসুমি-বিধৌত আমাদের দেশ জীবনন্দনতত্ত্বের অজস্র আকর্ষী উপাদানে সমৃদ্ধ। শাল-দেবদারুর রাজসিক সৌষ্ঠব, সেগুন-তেঁতুল-তালের বলিষ্ঠ গ্রথন, বিলাতি-ঝাউয়ের মর্মর, নাগকেশর-ছাতিমের উদ্ভ্রান্ত সুগন্ধি, কুর্চি-সজিনার শুভ্রতা, কৃষ্ণচূড়া-পলাশ-শিমুলের উচ্ছল বর্ণচ্ছটা, নারকেলের দুর্বার দুর্মর সবুজ, পদ্ম-শাপলার ললিত লাবণ্য, কাশমঞ্জরির অবারিত উচ্ছ্বাস, সুন্দরী-গেওয়া-গোলপাতার নিরন্ধ্র নীল, বটের নিশ্চিদ্র ছায়া আমাদের নিসর্গ-শিল্পীর প্রিয় রং ও রেখা, আকার ও অলংকার। শ্যামলী নিসর্গ গ্রন্থে ঢাকার এমন সব রাজসিক বৃক্ষরাজির বর্ণাঢ্য আলাপচারিতাই পাওয়া যাবে। দেশবিভাগের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগেকার সময়ের পটভূমিতে লেখা ঢাকার বৃক্ষশোভার প্রথম আনুষ্ঠানিক দলিল এই বই। দ্বিজেন শর্মা তাঁর তারুণ্যের হৃদয় নিংড়ানো সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে এখানে বৃক্ষস্তুতি করেছেন। গ্রন্থে উল্লিখিত প্রায় শত বৃক্ষের সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা থেকে একথার সত্যতা মেলে। বিজ্ঞান ও সাহিত্যের যুগপৎ ভ্রমণ কতটা মধুর, আনন্দময় ও মাধুর্যমণ্ডিত হতে পারে তার বড় প্রমাণ শ্যামলী নিসর্গ। একাধারে বিজ্ঞান, সাহিত্য ও গবেষণার শৈল্পিক সমন্বয় এই বইয়ের প্রাণ। সঙ্গে আছে শিল্পীর জীবন্ত নকশা ও অলঙ্করণ। একই সঙ্গে ভাষার সৌকর্য, ভাবনার বিচিত্রতা ও বাঙালি কবিকুলের পুষ্প-বৃক্ষের উদ্ধৃতি এই বইয়ের বিশেষ দিক। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বা গ্রন্থভুক্ত অনেক বৃক্ষই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু শ্যামলী নিসর্গের বৃক্ষকথা আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ২৯ মে ১৯২৯ সালে, মৌলভীবাজার জেলার শিমুলিয়া গ্রামে। পিতা চন্দ্ৰকান্ত শৰ্মা এবং মাতা মগ্নময়ী দেবী। একাধারে নিসর্গবিদ, বৃক্ষপ্রেমিক, অনুবাদক, শিশুসাহিত্যিক, বিজ্ঞানলেখক,গবেষক ও শিক্ষক। উদ্ভিদ, ফুল, পাখি নিয়ে মেতে থেকেছেন সারাটি জীবন। এগুলো নিয়ে বলতে লিখতে পড়তে ভালোবাসেন। ১৯৫৮ সালে উদ্ভিদবিদ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষক হিসেবে। বরিশালের ব্ৰজমোহন কলেজ ওঢাকার নটরডেম কলেজ, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেন ও বাংলা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অনুবাদকের চাকরি নিয়ে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো চলে যান। দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন প্রবাসজীবন। সেই সুবাদে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও জার্মানি ভ্ৰমণ করেছেন। সবখানেই বোটানিক গার্ডেন খ্যাত প্রধান-প্রধান পার্ক ও বাগান দেখেছেন আনন্দ ও আগ্রহে। অনেক লিখেছেন বিজ্ঞান, শিক্ষা ও প্রকৃতি বিষয়ে। পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান পরিষদের ড.কুদরাত-ই-খুদা স্মৃতি স্বর্ণপুরস্কার, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমী পুরস্কারসহ নান পদক ও সম্মাননা।