পরিচয় আমাদের চিন্তায় বিশ্ব এবং জীবন সম্পর্কিত ধারণাই হলো 'দার্শনিক' ধারণা। দুটি উপাদান দ্বারা এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত। প্রথমতঃ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় এবং নৈতিক ধ্যান-ধারণা, দ্বিতীয়তঃ সেই জাতীয় অনুসন্ধান- যেগুলোকে 'বৈজ্ঞানিক' আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে শব্দটি বিস্তৃততম অর্থে ব্যবহার করা হয়। একক দার্শনিকদের নিজস্বতন্ত্রে দুটি উপাদানের আপেক্ষিক অনুপাত সম্পর্কে গভীর মতবিরোধ রয়েছে, তবু কিছু মাত্রায় উভয়ের অস্তিত্ব থাকাই দর্শনশাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য। নানাভাবে ব্যবহৃত হয়েছে 'দর্শনশাস্ত্র' শব্দটি, এর ব্যবহার কোথাও সুপ্রসারিত, কোথাও সঙ্কীর্ণ। এ শব্দটিকে আমি ব্যবহার করতে চাই অতি ব্যাপক অর্থে, আর তা নিয়েই এখন ব্যাখ্যা করব। আমি বিশ্বাস করি-দর্শনশাস্ত্র হলো ধর্মতত্ত্ব ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী একটা কিছু। ধর্মতত্ত্বের মতোই এতে রয়েছে এমন সব ব্যাপার সম্পর্কে দূরকল্পন (speculations) যেসব ব্যাপার আজও নির্দিষ্ট নিশ্চিত নয়; কিন্তু ঐতিহ্য কিংবা উদঘাাটিত (revelation) জ্ঞানের কাছে নয়, বিজ্ঞানের মতোই এর আবেদন মানুষের যুক্তির কাছে। সমস্ত নির্দিষ্ট নিশ্চিত জ্ঞানই বিজ্ঞানের অধিকারে-আমি এটা বলতেই দৃঢ়তা পোষণ করি।
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।