‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবে বরাত: ফযীলত ও আমল’ বইয়ের ভূমিকাঃ بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على النبي الأمي محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين. أما بعد শবে বরাত বা “মধ্য-শা'বানের রাত”-এর মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথা সমাজে প্রচলিত। মুসলিমগণ এ রাতে বিশেষ ইবাদতে মগ্ন হয়ে পড়েন। মীলাদমাহফিল, ওয়ায-নসীহত, বিশেষ মুনাজাত, তাবারুক বিতরণ, কবর যিয়ারত ও বিশেষ সালাতে মুসল্লীরা মগ্ন থাকেন এ রাতে। কিন্তু এ রাতের ফযীলতে কথিত এ সকল বক্তব্য কতটুকু নির্ভরযোগ্য এবং এ রাতের বিশেষ ইবাদত কুরআনসুন্নাহর আলোকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা গুরুত্বের দাবীদার তা নিয়ে আলিম সমাজে বিভিন্ন বক্তব্য ও মতভেদ রয়েছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে মুসলমানরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং অনেক সময় গালাগালি ও শত্রুতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। এ সকল মতভেদ ও মতপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ রাতের মর্যাদা ও এ রাতের করণীয় নির্ধারণ করা এ পুস্তিকাটি উদ্দেশ্য। এতে আমরা মধ্য-শাবানের রাত্রির ফযীলত ও এ রাত্রে বা পরের দিনে পালনীয় বিশেষ ইবাদত সম্পর্কে উদ্ধৃত কুরআনের আয়াত ও মুফসিরগণের বক্তব্য আলোচনা করেছি। এরপর এ বিষয়ে বর্ণিত ও প্রচলিত সকল হাদীস উদ্ধৃত করে সেগুলির গ্রহণযোগ্যতা, বিশুদ্ধতা বা অশুদ্ধতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মতামত পর্যালোচনা করেছি। এভাবে আমরা সামগ্রিক ভাবে এ রাতে মুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলির সম্পর্কে সঠিক সীদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ক হাদীসগুলি সম্পর্কে প্রথমে আরবীতে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। পরবর্তীতে আমার সম্মানিত সহকর্মী দা'ওয়াহ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. অলী উল্যাহ প্রবন্ধটি সমৃদ্ধ করে বাংলায় রূপন্তর করেন। এ প্রবন্ধই এ গ্রন্থের মূল ভিত্তি। এ বিষয়ে একটি পৃথক বই লিখব বলে “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলাম। অনেক পাঠক বারবার গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য তাকিদ দিচ্ছিলেন। তাদের তাকিদের প্রেক্ষাপটে তাড়াহুড়ো করেই বইটি প্রকাশ করছি। সুন্নাতে নববীর উজ্জীবন ও প্রতিষ্ঠাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। হাদীসে নববীর আলোকে এ রাতের ফযীলত এবং সে ফযীলত অর্জনে রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবীগণের সুন্নাত পরিপূর্ণরূপে অবগত হওয়াই আমাদের প্রচেষ্টা। মহান আল্লাহর দরবারে সকাতরে প্রার্থনা করি, তিনি দয়া করে এই নগন্য কর্মটুকু “উপকারী ইলম” হিসেবে কবুল করে নিন এবং একে আমার, আমার পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন ও পাঠকদের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দিন। আমীন! আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সূচীপত্রঃ ১. শবে বরাত বনাম মধ্য-শাবানের রজনী /৭ ২. ফযীলত ও আমলের উৎস ওহী /৭ ২. ১. ওহী ও তার প্রকারভেদ /৭ ২. ২. হাদীস ও হাদীস নিরীক্ষা /৮ ২. ৩. ফযীলত ও আমল বনাম সুন্নাত /৯ ৩. আল-কুরআনে শবে বরাত /১০ ৪. মধ্য-শাবানের রজনী বিষয়ক হাদীসগুলির বিষয়বস্তু /১৬ ৫. মধ্য-শাবানের রজনীর সাধারণ ফযীলতে বর্ণিত হাদীস সমূহ /১৬ ৫. ১. হাদীস নং ১: আবু মূসা আশআরী (রা) বর্ণিত হাদীস /১৬ ৫. ২. হাদীস নং ২: আউফ ইবনু মালেক (রা) বর্ণিত হাদীস /১৭ ৫. ৩. হাদীস নং ৩: আব্দুলাহ ইবনু আমর (রা) বর্ণিত হাদীস /১৮ ৫. ৪. হাদীস নং ৪: মুয়ায ইবনু জাবাল (রা) বর্ণিত হাদীস /১৮ ৫. ৫. হাদীস নং ৫: আবু সা'লাবা খশানী (রা) বর্ণিত হাদীস /১৯ ৫. ৬. হাদীস নং ৬: আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীস /২০ ৫. ৭. হাদীস নং ৭: আবু বাকর সিদ্দীক (রা) বর্ণিত হাদীস/২০ ৫. ৮. হাদীস নং ৮: আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীস /২১ ৫. ৯. হাদীস নং ৯: তাবেয়ী কাসীর ইবনু মুররা বর্ণিত হাদীস /২১ ৬. মধ্য-শাবানের রাত্রিতে ভাগ্যলিখন বিষয়ক হাদীসসমূহ /২২ ৬. ১. হাদীস নং ১০: জন্ম-মৃত্যু লিখা, কর্ম উঠানো ও রিক প্রদান /২৩ ৬. ২. হাদীস নং ১১: চার রাত্রিতে ভাগ্য লিখন /২৪। ৬. ৩. হাদীস নং ১২: রিক অবতরণ ও হাজীদের তালিকা প্রণয়ন /২৪ ৬. ৪. হাদীস নং ১৩: মালাকুল মাউতকে মৃতদের নাম জানানো /২৫ ৭. মধ্য-শাবানের রাত্রিতে দোয়া-ইসতিগফার বিষয়ক হাদীস /২৬ ৭. ১. হাদীস নং ১৪: এ রাত্রির দোয়া-ইসতিগফার কবুল হয় /২৬ ৭. ২. হাদীস নং ১৫: পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না /২৮ ৭. ৩. হাদীস নং ১৬: গোরস্থান যিয়ারত ও মৃতদের জন্য দোয়া /৩০ ৮. অনির্ধারিতভাবে সালাত ও দোয়ার উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস /৩২ ৮. ১. হাদীস নং ১৭: মধ্য শাবানের রাত্রিতে ইবাদত ও দিবসে সিয়াম /৩২ ৮. ২. হাদীস নং ১৮: রাত্রিকালীন সালাত আদায় ও সাজদায় দোয়া /৩৩ ৮. ৩. হাদীস নং ১৯: রাত্রিকালীন নামায আদায় ও দীর্ঘ সাজদা /৩৬ ৮. ৪. হাদীস নং ২০: সাজদায় ও সাজদা থেকে উঠে বসে দোয়া /৩৭ ৮. ৫. হাদীস নং ২১: সালাতের সাজদায় ও সাজদা থেকে উঠে দোয়া /৩৯ ৮. ৬. হাদীস নং ২২: বাকী’ গোরস্থানে সাজদারত অবস্থায় দোয়া /৪১ ৮. ৭. হাদীস নং ২৩: দুই ঈদ ও মধ্য-শাবানের রাত্রিভর ইবাদত /৪১ ৮. ৮. হাদীস নং ২৪: পাঁচ রাত্রি ইবাদতে জাগ্রত থাকার ফযীলত /৪২ ৮. ৯. হাদীস নং ২৫: এ রাত্রিতে রহমতের দরজাগুলি খোলা হয় /৪৩ ৯. নির্ধারিত পদ্ধতিতে সালাত আদায় বিষয়ক হাদীস /৪৩ ৯. ১. হাদীস নং ২৬: ৩০০ রাক'আত, প্রতি রাকআতে ৩০ বার ইখলাস /8৪ ৯. ২. হাদীস নং ২৭: ১০০ রাক'আত, প্রতি রাকআতে ১০ বার ইখলাস /৪৪ ৯. ৩. হাদীস নং ২৮: ১০০ রাক'আত, প্রতি রাকআতে ১০ বার ইখলাস /৪৫ ৯. ৪. হাদীস নং ২৯: ১০০ রাক'আত, প্রতি রাকআতে ১০ বার ইখলাস /৪৫ ৯. ৫, হাদীস নং ৩০: ১০০ রাক'আত, প্রতি রাক'আতে ১০ বার ইখলাস /৪৬ ৯. ৬. হাদীস নং ৩১: ৫০ রাকআত সালাত /৪৬ ৯. ৭. হাদীস নং ৩২: ১৪ রাকআত সালাত /৪৭ ৯. ৮. হাদীস নং ৩৩: ১২ রাক'আত, প্রত্যেক রাক'আতে ৩০ বার ইখলাস /৪৭ ১০. কিছু সনদবিহীন বানোয়াট কথা /৪৯ ১০. ১. শবে বরাতের গোসল /৪৯ ১০. ২. শবে বরাতের হালুয়া-রুটি /৫০ ১০. ৩. ১৫ই শা'বানের দিনে সিয়াম /৫০ ১০. ৪. প্রচলিত আরো কিছু ভিত্তিহীন কথা /৫০ ১১. সাহাবী-তাবিয়ীগণের মতামত ও কর্ম /৫২ ১১. ১. হাদীস নং ৩৪: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস /৫৪ ১১. ২. হাদীস নং ৩৫: তাবিয়ী আতা ইবনু আবি রাবাহ /৫৪ ১১. ৩. হাদীস নং ৩৬: তাবিয়ী উমার ইবনু আব্দুল আযীয /৫৪ ১১. ৪. হাদীস নং ৩৭: তাবিয়ী খালিদ ইবনু মা’দান /৫৪ ১১. ৫. হাদীস নং ৩৮: তাবিয়ী ইবনু আবী মুলাইকা /৫৫ ১১. ৬. হাদীস নং ৩৯: মদীনার তাবিয়ীগণের মতামত /৫৬ ১২. চার ইমাম ও অন্যান্য ফকীহের মতামত /৫৭ ১৩. শবে বরাত বিষয়ক হাদীসগুলির প্রতিপাদ্য /৫৮ ১৪. শবে বরাতের বরকত লাভের পূর্বশত /৬০ ০ ১৪. ১. নেক আমল কবুলের সাধারণ শর্তাবলি /৬০ ১৪. ২. শিরক বর্জন /৬০ ১৪. ৩. হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন /৬০ ১৪. ৪. ফরয বনাম নফল /৬৩ ১৪. মুমিন জীবনের প্রতিটি রাতই শবে বরাত /৬৩ ১৫. শেষ কথা /৬৪
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলাম ধর্ম বিষয়ক ব্যক্তিত্ব, লেখক এবং গবেষক। তাঁর জন্ম ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে আলিম, ফাজিল এবং আল হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি সৌদি আরবের রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরপর দুবার সেরা ছাত্রের পুরষ্কার লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকার দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস, এবং পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন বাংলাসহ বিভিন্ন চ্যানেলে ধর্মবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। সর্বদা মানুষকে ইসলামমুখী করার ব্যাপারেই তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ২০১৬ সালের ১১ মে মাগুরায় এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন দেশবরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বইগুলো সবই ইসলাম ধর্ম বিষয়ক। তিনি ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ত্রিশের অধিক বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে কিছু অনুবাদ, কিছু ব্যখ্যা ও গবেষণামূলক। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমূহ এর মাঝে এহইয়াউস সুনান, কুর’আন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, রাহে বেলায়াত, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, খুতবাতুল ইসলাম, A Woman From Desert, Guidance For Fasting Muslims, A Summary of Three Fundamentals of Islam প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি আরবী ভাষাতেও বই রচনা করেছেন। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমগ্র মানুষকে ইসলামমুখী করতে, ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি কেবল বইয়ের গণ্ডির মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। এর পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ধর্মপ্রচার এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথেও নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রাখতেন তিনি।