রফিকুল ইসলাম, বীরউত্তম, ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা আশরাফ উল্লাহ ঢাকা জেলার ডিস্ট্রিক্ট এ্যাডুকেশন অফিসার ছিলেন। তিন ভাই ও ছয় বােনের মধ্যে রফিকুল ইসলাম পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। রফিকুল ইসলাম নিজ গ্রামের নাওড়া স্কুল, পিরােজপুরের ভান্ডারিয়ায়, গােপালগঞ্জ মডেল স্কুল, পালং, কুমিল্লার চান্দিনা ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় লেখাপড়া করেন এবং ১৯৫৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার অন্নদা মডেল হাই স্কুল হতে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আইএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্সে পড়াশুনা করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ‘ইউপিপি’ সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মিতে যােগ দেন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান আর্মির ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তীতে তাঁকে আর্টিলারী কোরে নেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে তিনি লাহোের ক্যান্টনমেন্ট থেকে তার ইউনিট ২৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট (আর্টিলারী) সহ যশােহর ক্যান্টনমেন্টে আসেন এবং রেজিমেন্টের এ্যাডজুট্যান্ট-এর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ডেপুটেশনে দিনাজপুরে ৮ উইং ইপিআর-এর এ্যাসিস্ট্যান্ট উইং কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর চট্টগ্রামস্থ হেডকোয়ার্টারে এ্যাডজুট্যান্ট পদে যােগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ৮.৪০ মিনিটে তিনি তার অধীনস্থ ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিক ও জেসিওদের নিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্যে আরাে অনেকের সাথে তাঁকে জীবিত ব্যক্তিবর্গের সর্বোচ্চ সম্মান বীরউত্তম’-এ ভূষিত করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর কিছুকাল তিনি চট্টগ্রামে সে সময়কার বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দি পিপলস্ ভিউ'-র সহযােগী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হ্যান্ডলুম বাের্ড-এর চেয়ারম্যান এবং তারপরে বি.আই.ডব্লিউ.টি.সি.'র চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট’-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্বার্ড বিজনেস স্কুলে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রােগ্রামে অধ্যয়ন করেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের প্রথম নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা (মন্ত্রী) হিসেবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-এই দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৯১ সালে চাকরি হতে অবসর নেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা ২৬৪-চাঁদপুর-৫ হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন হতে ১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তাঁর রচিত ‘এ টেল অব মিলিয়নস' বইটি ১৯৭৪ সালে এবং বইটির বাংলা অনুবাদ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সমকালীন বিষয়াদির ওপর তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়।।