মামুন তরফদার
মামুন তরফদার, প্রকৃত নাম আবদুল্লাহ আল—মামুন তরফদার। লেখালেখির জগতে মামুন তরফদার নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৫ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার ঢেপাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ঘুঠু তরফদার, মাতার নাম মোছা: জয়গন বেওয়া। স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম— ঢেপাকান্দি, ডাকঘর— ফলদা, উপজেলা— ভূঞাপুর, জেলা— টাঙ্গাইল। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহীম খাঁ কলেজ, ভূঞাপুর টাঙ্গাইল থেকে ডিগ্রি পাস করেন। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে সরকারি সা’দত কলেজ, করটিয়া, টাঙ্গাইল থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. প্রথম পর্ব সমাপ্ত করেন। তিনি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত । পেশাগত জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা, গবেষণা, লোক—সাহিত্য ও ইতিহাস সংগ্রহ,গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অতিথি শিল্পী।ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও লোক—সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত। মামুন তরফদারের লেখা ছাত্র জীবন থেকেই জাতীয় দৈনিক ও বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থাপিত তার প্রবন্ধের সংখ্যা ২৭ টি। তিনি গবেষণাধমীর্ কাজে স্থিত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, এবং লোক—সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। ফোকলোর ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষণায় তাঁর ক্লান্তিহীন নিরন্তর মনোযোগ। বাংলা একাডেমির বাংলাদেশের লোকজসংস্কৃতি গ্রন্থমালা টাঙ্গাইল গ্রন্থের সংগ্রাহক। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক গবেষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, ঘাটাইল, ভূঞাপুর, সখিপুর ও নাগরপুর উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এনসাইক্লোপিডিয়া’ গ্রন্থের কাজ করেছেন। টাঙ্গাইল জেলার স্থাননাম বিচিত্রা গ্রন্থের তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। মামুন তরফদার ১৯৭১ : গণহত্যা—নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এর নিয়োগপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছেন। তারপর গণহত্যা—নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র খুলনা ও ১৯৭১ : গণহত্যা—নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের যৌথ নিয়োগপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে জামালপুর জেলার ও টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর কয়েকটি বই বাংলাদেশ টেলিভিশনে কবি আসাদ চৌধুরীর মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের বহুল আলোচিত ‘দেশটাকে ভালোবেসে’ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে লেখক ও গবেষক হিসেবে ষোলটি অনুষ্ঠানে স্বাক্ষাৎকার দিয়ে সুনাম অর্জন করেন। তাছাড়াও এটিএন বাংলা, সময় টিভি, চ্যানেল আই, বৈশাখী, এনটিভি, আরটিভি ও দিগন্ত টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্থানীয় ইতিহাস—ঐতিহ্য এবং লোকসংস্কৃতি বিষয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। মামুন তরফদার কবিকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। সৃষ্টি সাহিত্য পরিষদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। গতি সাহিত্য পরিষদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। বাংলাদেশ মফস্বল লেখক ফোরাম, ভূঞাপুর উপজেলা শাখা, টাঙ্গাইল—এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। স্থানীয় ও জাতীয় অনেক সাপ্তাহিক, দৈনিক পত্র—পত্রিকায় ও জার্নালে এবং বিভিন্নজনের সম্পাদিত গ্রন্ধে তাঁর ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ—নিবন্ধ ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— স্বাধীনতাার বাছাই ছড়া,টাঙ্গাইলের নির্বাচিত ছড়া,ছড়ায় ছড়ায় বাংলাদেশ,আধুনিক প্রেমের কবিতা, বাংলাদেশের প্রতিবাদী কবিতা, এ সময়ের ভালোবাসার কবিতা, টাঙ্গাইলের স্থান—নাম –বিচিত্রা, টাঙ্গাইলের লুপ্তপ্রায় লোক—সংস্কৃতি, ভূঞাপুরের ভালোমানুষ, ভূঞাপুরের আলোকিত মানুষ,বাংলাদেশর কবি ও কবিতা , স্বাধীনতার কবিতা, বিশ শতকের বাংলা, ভাষাভাবনা সম্পাদিত গ্রন্থসহ অনেক স্মারক গ্রন্থে লেখা ছাপা হয়েছে। মামুন তরফদার সম্পাদিত স্থানীয় লিটল ম্যাগাজিনগুলো হলো— দ্বি—মাসিক কবি কণ্ঠ, ত্রৈ—মাসিক সৃষ্টি, মাসিক গতি, মাসিক জলসা পত্র,বাৎসরিক জয়, মাসিক সাহিত্য প্রতিভা ইত্যাদি। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্র—পত্রিকায়ও মামুন তরফদারের প্রচুর ছড়া—কবিতা ও প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে ও হচ্ছে। যেমন— ত্রৈমাসিক ভিটেমাটি, মাসিক দ্বিগবলয়, মাসিক কবিতায়ন, মাসিক রেনেসাঁ, মাসিক চলন্তিকা, মাসিক আগুনের ফুল, মাসিক খনন, মাসিক অসিমায়ন, মাসিক দৌড়সহ প্রায় অর্ধশত কাগজে লেখা ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া কুয়েত থেকে প্রকাশিত পদক্ষেপ নামক বাংলা কবিতায় তার ছড়া ও কবিতা ছাপা হয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল জেলা ওয়েব সাইটে তাঁর ছয়টি তথ্য সম্বলিত লেখা স্থান পেয়েছে। লেখাগুলোর শিরোনাম হলো— ১. টাঙ্গাইল অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস ২. টাঙ্গাইল নামকরণের ইতিহাস ৩. টাঙ্গাইল জেলা সৃষ্টির ইতিহাস ৪. টাঙ্গাইল সম্পদ ৫. টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য ৬. টাঙ্গাইলের ভাষা ও সংস্কৃতি। আজীবন সদস্য—বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, ঢাকা।সদস্য নম্বর ১১৪০। আজীবন সদস্য—বাংলাদেশ হেরিটেজ আরকাইভস, রাজশাহী।সদস্য নম্বর ৫২। আজীবন সদস্য— বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। সদস্য নম্বর ১৪৩৬। সদস্য এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, নিমতলী, ঢাকা।সদস্য নম্বর ২০৮৯। সদস্য— বাংলা একাডেমি, ঢাকা।সদস্য নম্বর—৩৬৭৩। আজীবন সদস্য পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, কলিকাতা, ভারত। সদস্য বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।সদস্য নম্বর ৪২/২০১৫। আজীবন সদস্য—প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ পাঠাগার, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। এছাড়াও জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অনেক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৩ টি। প্রকাশিত গ্রন্থের নাম — ১. তরফদারের ছড়া, প্রকাশকাল— ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, ২. ভালোবাসার মানচিত্র (কাব্য), প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০০, ৩. ভূঞাপুরের খেলাধুলার ইতিহাস, প্রকাশকাল ২০০১, ৪. জলসার লেখকদের সেরালেখা (সম্পাদিত), প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০২, ৫. টাঙ্গাইল জেলার লুপ্তপ্রায় লোক—সাহিত্য ও সংস্কৃতি, প্রকাশকাল ডিসেম্বর ২০০২, ৬. টাঙ্গাইলের ছড়া (সম্পাদিত), প্রকাশকাল আগস্ট ২০০৫, ৭. টাঙ্গাইলের লোক—ঐতিহ্য, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৬, ৮. টাঙ্গাইল জেলার চরিতাভিধান (যৌথ সম্পাদনা), প্রকাশকাল ২০০৭, ৯. লোকসাহিত্যে টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ১০. সিরাজকান্দীর জাহাজ ধ্বংসের ইতিহাস, প্রকাশকাল ২০১০, ১১. লোকসংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২. কবি মুজাফফর আলী তালুকদার স্মারক গ্রন্থ (সম্পাদনা), প্রকাশকাল ২০১৪, ১৩. স্বাধীনতা যুদ্ধে টাঙ্গাইল, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১৪. গোড়ান সাটিয়াচড়া গণহত্যা, প্রকাশকাল ২০১৫, ১৫.টাঙ্গাইলের ছড়া ও কবিতা, প্রকাশকাল এপ্রিল ২০১৭, ১৬. প্রিয়জনের পত্রালাপ, প্রকাশকাল এপ্রিল ২০১৭, ১৭. বাংলার লোকজ ঐতিহ্য, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮. শামসুল আলম মোহন স্মারকগ্রন্থ (সম্পাদিত) প্রকাশকাল ২০১৮, ১৯. ছাব্বিশা গণহত্যা, প্রকাশকাল ২০১৮, ২০. বাংলার লোকসংস্কৃতিতে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১. গণহত্যা—বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ : জামালপুর জেলা, প্রকাশকাল ২০১৯, ২২. গণহত্যা—বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ : টাঙ্গাইল জেলা, প্রকাশকাল ২০২০, ২৩. বাংলার লোকসংস্কৃতিতে শেখ মুজিবের মুক্তিযুদ্ধ, প্রভৃতি। মামুন তরফদার ধুপশলা সাহিত্য সংসদ পুরস্কার — ২০০৬, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ কতৃর্ক সম্মাননা প্রাপ্ত — ২০০৮, গবেষণায় — ইনছান আলী ভূঁইয়া সম্মাননা প্রাপ্ত — ২০১০, গবেষণায় ছায়ানীড় পুরস্কার প্রাপ্ত — ২০১৩, বিকাশ সাহিত্য সংসদ পুরস্কার — ২০১৪, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার — ২০১৫, বাংলাদেশ কবি—লেখক সম্মাননা স্মারক — ২০১৭, ভূঞাপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক লেখক ও গবেষক সম্মাননা স্মারক — ২০১৯ প্রাপ্ত হয়েছেন। এই শিকড় সন্ধানী লেখক তাঁর নিজ জেলা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ও স্থানীয় ইতিহাসের অনেক উপাদান তাঁর সংগ্রহে রয়েছে।