‘অচেনা কোরআন : দর্শন ও বাস্তবতা’ বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক একদিকে যেমন চমৎকৃত হবেন লেখকের সাহিত্যিক, দার্শনিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে; অন্যদিকে কখনো কখনো আচমকা প্রশ্নতাড়িত হবেন, সংশয়বিদ্ধ হবেন। একই সঙ্গে কখনো উজ্জীবিত হবেন, আশান্বিত হবেন। পড়তে পড়তে আপনার মনে হবে, এ মহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এর আগে আপনার কখনো দেখাই হয়নি, যিনি কেবল বান্দার ঋণের ও অকৃতজ্ঞতার দায়ভারই গ্রহণ করেননি, বরং তিনি বান্দার প্রতি কৃতজ্ঞতাপরায়ণ এক প্রভু। লেখকের গবেষক মন সাহিত্যের সাথে ধর্ম, ধর্মের সাথে মনস্তত্ত্ব, এবং প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের মিলনের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আজকের প্রোগ্রেসিভ মুসলিম নারী যিনি নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখতে চান, নিজের বোধবুদ্ধি দিয়ে তাকে সংজ্ঞায়িত করতে চান, তার জন্য এ বইটি অবশ্যপাঠ্য। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ, যারা একটা উদারনৈতিক সমাজের স্বপ্ন দেখে; যারা অধর্মের যাঁতাকলে পিষ্ট ধর্মের শিকলে আংশিক বন্দি, আবার একই সঙ্গে তারা প্রবল সংস্কারপন্থী; যারা ধর্মের ব্যাপারে আপাত উদাসীন, আবার কুসংস্কারাচ্ছান্ন সমাজে আজন্ম বসবাসের দরুন ধর্ম বিষয়ে পুরাতনকে বর্জন ও নতুনকে গ্রহণেও তাদের দ্বিধা, সংকোচ ও ভয়; যারা ধর্মনেতাদের বাড়াবাড়িতে ধর্মবিষয়ে বীতশ্রদ্ধ, আবার একই সাথে ধর্মের বিষয়ে আগ্রহী, তাদের মনের খোরাক যোগাবে এ বইটি। এ মধ্যবিত্ত সমাজে মধ্যযুগীয় ধর্মচর্চা আর আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মননের মধ্যে যে আত্ম—দ্বৈরথ, তার সত্যানুসন্ধানী প্রতিফলন খুঁজে পাবেন পাঠক বইটির একেকটি অধ্যায়ে। এই বইয়ের পাঠক শুধু নারীই নন, প্রতিটি পুরুষও এর অবশ্যম্ভাবী পাঠক। এ বই পাঠে তিনি কখনো লজ্জিত হবেন, কখনো উজ্জীবিত হবেন। আবার কখনো ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও আবেগতাড়িত হবেন। এ বইয়ের সম্ভাব্য পাঠক তারাও যারা প্রবাসী বাংলাদেশী, বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম। যারা প্রাচ্যসমাজ থেকে এসে পাশ্চাত্যসমাজকে না পারছেন হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে, আবার না পারছেন পুরোপুরি বর্জন করতে। সে সব দ্বিধাবিভক্ত মানুষগুলোর জন্য, তাদের বর্তমান ও অনাগত সন্তানদের জন্য এ বই নতুন পৃথিবীকে ইসলামের আলোয় গ্রহণ করার সাহস ও শক্তি জোগাবে।
ড. আনিসুর রহমান ফারুক, জন্ম বাংলাদেশে। পেশায় শিক্ষক। শিক্ষাজীবনে অসাধারণ সাফল্যের অধিকারী, রাষ্ট্রপতিপদকপ্রাপ্ত। তিনি বাংলাদেশে ব্যবসায় প্রশাসনে বিবিএ, এমবিএ সমাপ্ত করে জাপান সরকারের মর্যাদাপূর্ণ মনবুশো স্কলারশিপে হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’—তে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্যানটারবারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও ব্যবসায়’ বিষয়ে পিএইচডি ও ২০২১ সালে ফিনল্যান্ডের Lut University থেকে একই বিষয়ে তিনি দ্বিতীয় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ফিনল্যান্ডের University of Vaasa—তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। গবেষণায় সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড: European International Business Academy Best Paper Award 2017, Vaasa Conference on International Business Best Paper Award 2019। তিনি দুটি আন্তর্জাতিক জার্নালের সহযোগী সম্পাদক এবং বেশ কয়েকটি জার্নালের সম্পাদকীয় রিভিউ বোর্ডের সদস্য। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর পঞ্চাশের অধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর ব্যানারে আছে তাঁর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বই। শিক্ষা, শিক্ষকতা ও গবেষণায় সাফল্যের পর একধরনের দায়বোধ থেকেই তাঁর ধর্ম নিয়ে গবেষণা, লেখালেখির শুরু। কোরআন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এতোটাই আলোড়িত হোন যে, তিনি তাঁর অনুভূতি এবং উপলব্ধির কথা বাংলাভাষাভাষি মানুষের কাছে পৌঁছানোকে নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। একজন বিজ্ঞানমনস্ক গবেষকের চোখ ও মন দিয়ে ধর্মকে বিবেচনা করেন বলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি উদার।