"গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: সীরাতচর্চা ও গবেষণার একজন ছাত্র হিসাবে দেখেছি—মহীয়সী খাদিজা সীরাতের আকাশে এক জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। এই দ্যোতিত নক্ষত্রের বৈভিক ঐশ্বর্যে আমার হৃদয়-মন বার বার আলােকিত হয়েছে। একাধিক সীরাত বিষয়ক কিতাব লিখতে গিয়ে আমি বার বার থমকে দাঁড়িয়েছি এই মহান চরিত্রটির পাশে। বিস্মিত হয়েছি। আপ্লুত হয়েছি। বিমুগ্ধ হয়েছি। আহরণ করেছি—শক্তি। বল। আদর্শ। সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের অবিনাশী চেতনা। তাঁকে নিয়ে এই কিতাবটি লিখতে বসে যে কথাটি বার বার আমার মনে ছায়া বিস্তার করেছে তা হলাে এই—তাঁর সংগ্রামী ও সােনালি এবং নবুওত-বিধৌত জীবনের একটুখানি পরশ যদি লাগে কোনাে নারী-জীবনে, তাহলে আমার বিশ্বাস সে নারীও হয়ে যাবেন ইতিহাসের মহীয়সী। তাঁকে নিয়ে লেখা অনেক কিতাব চোখে পড়েছে। বাংলা আরবী। তবুও মনে হয়েছে—আমিও লিখবাে। মনকে শান্ত করার জন্যে আমারও লেখা প্রয়ােজন। খুঁজলাম উপযুক্ত আরবী কিতাব। কিন্তু পেয়েও যেনাে পাই না। বিষয় পেলে ভাব পাই না। ভাব পাই তাে অনুপ্রেরণা পাই না। হঠাৎ একদিন চোখ পড়লাে আলােচ্য কিতাবটিতে। পড়লাম একটু। আরেকটু। ভালাে লাগলাে। অনেক। শেষ পর্যন্ত অনুবাদে হাত দিলাম। শব্দ এড়িয়ে নিলাম ভাব। কোথাও কোথাও ছায়া। হযরত মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর আত্মজীবনী কারওয়ানে যিন্দেগির অনুবাদ থামিয়ে ডুবে গেলাম খাদিজাময় দিন-রাত্রিতে। যদি বলি; এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস, ভুল হবে না। আমার কাছে বার বার মনে হয়েছে, এখানে উপন্যাস-উপকরণনির্ভেজাল। সত্যপুষ্ট। আবেগ-মথিত। আদর্শের জ্যোতিতে চিরজ্যোতির্মান। উপন্যাসের প্রচলিত সংজ্ঞা এখানে ষােল আনা নাথাকলেও ইতিহাসের এ কাহিনী উপন্যাসের সেরা উপকরণ। এ কাহিনীর স্পর্শে উপন্যাস হতে পারে গর্বিত। সার্থক। তবুও নানা কারণে আমরা উপন্যাস শব্দটি এড়িয়ে কিতাবটির নাম রেখেছি— গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা।br খাদিজা কে? কেমন ছিলাে প্রিয় মুহাম্মদের সাথে নবুওত পূর্ববর্তী দাম্পত্য জীবনে তার দীর্ঘ পনেরােটি বছর? সে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনায় ভরপুর এক মজার কাহিনী! কেমন ছিলাে নবুওত পরবর্তী জীবনে প্রিয় রাসূলের পাশে এই মহীয়সী খাদিজা? এখানে আমরা খাদিজাকে আবিষ্কার করবাে। আকাশ-সহযােগী হিসাবে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক নবুওতের কাজে মুহূর্তে মুহূর্তে সাহায্য করছেন তাঁর প্রিয় রাসূলকে! খাদিজাও! ওহী’র নির্দেশ—সবাইকে ডাকো ঈমানের পথে! এখন কাকে ডাকবেন? কাকে দিয়ে দাওয়াতের কাজ শুরু করবেন? কে সাড়া দেবে? সবার আগে সাড়া দিলেন খাদিজা! ডাকার আগেই!! খুশিতে তৃপ্তিতে প্রাপ্তিতে ভরে গেলাে আল্লাহর নবীর মন! বাইরে বেরিয়ে যান প্রিয়নবী, দাওয়াতের কাজে! ফিরে আসেন ক্লান্ত হয়ে। কখনাে দুশমনের কথায় মন খারাপ করে! এখানেও খাদিজা প্রিয়নবীর পাশে আছেন! তাঁকে অভয়বাণী শােনান! তারবাক্যে যেনাে ঝরে ঝরে পড়ে—সান্ত্বনার পশলা পশলা বৃষ্টি! এভাবে খাদিজা ওফাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন ওয়াফাদার! এ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে তাঁর ওয়াফাদারির এক অপূর্ব কাহিনী! খাদিজার ওফাতে কতােটা কষ্ট পেয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল? সীমাহীন! সেদিন তিনি কেঁদেছিলেন! সাহাবীরা কেঁদেছিলেন! মক্কা কেঁদেছিলাে! আকাশ-পৃথিবীও কেঁদেছিলাে! হেসেছিলাে শুধু উম্মে জামিল আর আবু লাহাবেরা! এখানেই শেষ করছি কথা। এবার কিতাবের পাতায় আমন্ত্রণ!